ইরান হামলা চালালে সৌদি সরকার টেলিফোন করারও সময় পাবে না: পাওয়েল

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ'র প্রধান ম্যাক পোম্পেও দাবি করেছেন, তার দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ইরান হুমকি হয়ে উঠেছে। তিনি ইরানকে বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে বড় সমর্থক বলে উল্লেখ করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের আগে ইরানের সঙ্গে আমেরিকার কোনো সমস্যা ছিল না। কারণ তখন ইরান ছিল এ অঞ্চলে আমেরিকার প্রধান কৌশলগত মিত্র। কিন্তু ইসলামী বিপ্লবের পর আমেরিকার সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক পুরো উল্টে যায়।
ইরানে ইসলামী বিপ্লবে পর দু'টি কারণে আমেরিকা খুবই চিন্তিত ও বিচলিত হয়ে পড়েছে। প্রথমত, ইরানের ইসলামী সরকার ব্যবস্থা সেদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন হস্তক্ষেপের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। আমেরিকার দুশ্চিন্তার দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, ইসলামী ইরান অন্য স্বাধীনচেতা ও বিপ্লবী জাতিগুলোর জন্য আদর্শ বা মডেলে পরিণত হতে পারে যা কিনা এক সময় এ অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ রক্ষাকারী স্বৈরসরকারগুলোর জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
এ অঞ্চলে স্বাধীনচেতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী চেতনা রুখে দেয়ার জন্য আমেরিকা বহু চেষ্টা করেও এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন রক্ষণশীল কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসী ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া গণজাগরণ থামিয়ে দেয়ার বহু চেষ্টা করছে। অথবা তারা এ অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য এমনভাবে বিন্যাস করতে চাইছে যাতে তা মার্কিন স্বার্থের অনুকূলে থাকে। মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে কথিত সামরিক জোট গঠনের লক্ষ্যকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত মাসে সৌদি আরব সফর করার পরই মার্কিন কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় উঠেপড়ে লেগেছেন। আর এ ক্ষেত্রে তাদের প্রধান সহযোগী হচ্ছে সৌদি আরব।
সৌদি সরকার মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব বিস্তারের জন্য দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক পরিবর্তন আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসাবে সম্প্রতি সৌদি রাজা সালমান বিন আবদুল আজিজ তার ভাইপো মুহাম্মাদ বিন নায়েফকে যুবরাজের পদ থেকে সরিয়ে নিজ পুত্র মোহাম্মদ বিন সালমানকে বসিয়েছেন। এরফলে সালমানই হবেন পরবর্তী রাজা।
খ্যাতনামা মার্কিন চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নওম চমেস্কি কিছুদিন আগে গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানকে সবচেয়ে বড় হুমকি বলে যে মন্তব্য করেছেন সে বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, "বহু বছর ধরেই তারা এ ধরনের অভিযোগ করে আসছে। এর আগে বারাক ওমাবাও প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইরানকে বিশ্বের শান্তির জন্য হুমকি বলে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন।" খ্যাতনামা এই মার্কিন চিন্তাবিদ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, "যারা নিজেদের প্রতিরক্ষায় ব্যস্ত তারা কীভাবে অন্যের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে?"
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক দশকে মধ্যপ্রাচ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। আর এসব পরিবর্তনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইরানকে হুমকি হিসাবে তুলে ধরা। ঠিক একই উদ্দেশ্যে আমেরিকা, সৌদি আরব ও দখলদার ইসরাইল ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক জোট গঠন করেছে। শুধু ইরানের প্রভাব ঠেকানোর জন্যই সৌদি আরব আমেরিকার সঙ্গে ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্রক্রয় চুক্তি করেছে। কিছুদিন আগে সৌদি আরবের এক বিশ্লেষক দাবি করেছিলেন, "সৌদি আরব চাইলে মাত্র চার থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে ইরানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে।"  এই দাবীর জবাবে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, "এ ধরণের কথাবার্তা খুবই হাস্যকর। কারণ ইরান যদি কখনো হামলা চালায় তাহলে সৌদি সরকার সাহায্যের আবেদন জানানোর জন্য টেলিফোন তোলারও সময় পাবে না। তাই ইরানের ব্যাপারে বাস্তব সম্মত দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা উচিত এবং ইরানকে ইয়েমেন কিংবা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে তুলনা করা মোটেই উচিত হবে না। কারণ খোদ মার্কিন সরকারও ইরানে হামলা চালানোর দাবি করতে পারেনি।"
যাইহোক, বর্তমানে আমেরিকা ও দখলদার ইসরাইল কয়েকটি আরব দেশের সহযোগিতায় এ অঞ্চলের প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে দুর্বল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এ লক্ষ্যে সিআইএ'র প্রধান ম্যাক পোম্পেও, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাথিউসের মতো কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ভূমিকাকে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.