সবার দৃষ্টি রায়ের দিকে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এখন আদালতের দিকে তাকিয়ে বিশ্ববাসী। ইতিমধ্যেই এ সংক্রান্ত মামলায় যুক্তি-তর্ক শেষ হয়েছে। এখন রায়ের অপেক্ষা। চলতি সপ্তাহের যে কোনো সময় সিদ্ধান্ত দিতে পারেন সান ফ্রান্সিসকোর ফেডারেল আপিল আদালত। এ রায় কেবল সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কাটাবে না, ট্রাম্পের অভিবাসী নীতিকেও বদলে দিতে পারে। অথবা বহাল রাখতে পারে প্রেসিডেন্ট নির্বাহী আদেশ। আর তাতে কথিত ‘প্রটেকশনিজম’ চরিত্রে সংরক্ষিত ভূমি হয়ে উঠতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এমন অবস্থায় রায়ের অগেই আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বিচারকদের তিনি ‘রাজনৈতিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে ‘হৃদয়বিদারক’ এবং ‘মনোবল ভেঙে দেয়ার মতো’ বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিমকোর্টে তারই মনোনীত বিচারক নিল গসার্চ। খবর সিএনএন ও এএফপির। ২৭ জানুয়ারি ট্রাম্পের স্বাক্ষর করা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশে পরবর্তী চার মাসের জন্য সব ধরনের শরণার্থী ও পরবর্তী তিন মাসের জন্য ওই সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
গত শুক্রবার ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের ফেডারেল বিচারক ট্রাম্পের ওই নির্বাহী আদেশ স্থগিত করে রুল জারি করেন। কিন্তু স্থগিতাদেশের একদিন পরই শনিবার এর বিরুদ্ধে আপিল করে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। আপিলে তাৎক্ষণিকভাবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করার আবেদন জানানো হলেও তা অগ্রাহ্য করে বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউস ও বিচার বিভাগকে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করার কথা বলেন আপিল আদালত। সান ফ্রান্সিসকোর আপিল আদালত দুই পক্ষের বক্তব্য শুনতে সম্মত হন। শুনানিতে তিন বিচারকের প্যানেল প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা এবং সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশের সঙ্গে সন্ত্রাসের যোগ সূত্রের প্রমাণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিচারকদের দু’জন (একজন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও অন্যজন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের নিয়োগ) প্রশ্ন রাখেন, এমন কি ঘটনা ঘটেছে, যা থেকে বলা যায় ওইসব দেশের নাগরিকদের আগমনে বিপদ রয়েছে? উত্তরে সরকারি কৌঁসুলি বলেন, প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত যে এমন বিপদ রয়েছে। প্রেসিডেন্ট কি চাইলেই মুসলিমদের আসতে না দেয়ার নির্দেশ জারি করতে পারেন- এ প্রশ্নে সরকারি কৌঁসুলি বলেন, প্রেসিডেন্টের সে এখতিয়ার রয়েছে। আদালতের তৃতীয় বিচারক (জর্জ ডব্লিউ বুশ কর্তৃক নিয়োগকৃত) জানতে চান, এই নির্দেশে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হয়েছে, সে কথার কি প্রমাণ আছে? জবাবে বেসরকারি আইনজীবী বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘মুসলিম নিষিদ্ধকরণের’ প্রস্তাব করেছিলেন। এসময় আদালত জানতে চান, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞাকে মুসলিমবিরোধী আখ্যা দেয়া যাবে কিনা। নতুন সপ্তাহ শুরুর আগে অর্থাৎ রোববারের মধ্যেই এই রায় পাওয়া যাবে। তবে ওই রায় মার্কিন বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে গেলে আইনি লড়াই এখানেই শেষ না হতে পারে।
বিষয়টা গড়াতে পারে সুপ্রিমকোর্টে। এদিকে, বুধবার ওয়াশিংটন হোটেলে প্রধান শহরগুলোর আইনশৃংখলা রক্ষাকারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে আদালতের দেয়া নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গটি টেনে আনেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি একটি আদালতকে পক্ষপাতদুষ্ট বলতে চাই না। সুতরাং আমি এটাকে পক্ষপাতদুষ্ট বলব না। তাছাড়া আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। তবে আদালতের কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে তারা খুব রাজনৈতিক। তারা যদি পুরো বিষয়টির চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেন, সেটিই হবে আমাদের বিচার পদ্ধতির জন্য মঙ্গলময়। আমি মনে করি, আজ একটি বাজে দিন গেছে। আমার মনে হয় আমাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’ এর আগে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার ওপর দেশজুড়ে স্থগিতাদেশ জারি করায় সিয়াটলের ফেডারেল বিচারককে ‘তথাকথিত বিচারক’ ও তার রায়কে ‘হাস্যকর’ বলেন প্রেসিডেন্ট। বিচারকদের এভাবে আক্রমণের সমালোচনা করেছেন তারই মনোনীত সুপ্রিমকোর্টের বিচারক নিল গসার্চ। এক ডেমোক্রেট সিনেটরের সঙ্গে বৈঠকে তিনি ট্রাম্পের অভিযোগকে ‘হৃদয়বিদারক’ এবং ‘মনোবল ভেঙে দেয়ার মতো’ বলে মন্তব্য করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গসার্চের মুখপাত্র। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাতে মনোনয়ন পাওয়ার পরও তারই কর্মক্ষেত্রকে ট্রাম্পের এভাবে সন্দেহ, প্রশ্নবিদ্ধ ও অপমানিত করার কারণে এখন বেশ অস্বস্তিতেই আছেন বিচারিক মেজাজ ও তীক্ষœ আইনি মানসিকতার নিল গসার্চ।

No comments

Powered by Blogger.