শীতল যুদ্ধে ফিরতে চায় না ন্যাটো

জেনস স্টোলটেনবার্গ
রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্গ বলেছেন, ন্যাটো জোট আরেকটি শীতল যুদ্ধ চায় না। তারা রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের বিরোধে জড়াতে চায় না। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন স্টোলটেনবার্গ। মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টোলটেনবার্গ বিবিসিকে বলেন, সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক অভিযান চালানো এবং সেখানে রণতরি পাঠানো নিয়ে পাশ্চাত্যের সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনা বাড়লেও তাঁরা দেশটিকে হুমকি হিসেবে দেখছেন না।
স্টোলটেনবার্গ বলেন, সংঘাতের উসকানি দেওয়ার জন্য নয়, বরং সংঘাত ঠেকানোর জন্যই ন্যাটো পূর্ব ইউরোপে অতিরিক্ত চার হাজার সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে। ন্যাটোর মহাসচিব বুধবারই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রাশিয়ার সাম্প্রতিক সামরিক তৎপরতা তাদের জোটকে পূর্ব ইউরোপে সেনা সমাগম বাড়াতে বাধ্য করছে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে শীতল যুদ্ধ অবসানের পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় নেমে এসেছে। যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা মিত্রদেশগুলো পূর্ব ইউরোপে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতির আয়োজন করেছে। এমন পটভূমিতে ন্যাটোর পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য এল। রাশিয়া ২০১৪ সালে প্রতিবেশী ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ নিজের সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মস্কোর ওপর অবরোধ আরোপ করে। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষ নিয়ে দেশটির বিদ্রোহীদের ওপর রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরু করলে দুই পক্ষের উত্তেজনা আরও ঘনীভূত হয়। সিরীয় বিদ্রোহীদের অনেককে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিচ্ছে।
সম্প্রতি রাশিয়া তার মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র সিরিয়ার উপকূলে স্থায়ী নৌঘাঁটি গড়ার ঘোষণা দেয়। রাশিয়ার একটি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী রণতরি ন্যাটো দেশ যুক্তরাজ্যের গা-ঘেঁষে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে সিরিয়ার দিকে রওনা হয়েছে। দিন কয়েক আগে রণতরিটি জ্বালানি তেল নেওয়ার জন্য ন্যাটো সদস্য স্পেনে ভিড়তে চেয়েছিল। তবে ওই রণতরি থেকে হামলা চালিয়ে সিরিয়ার বেসামরিক মানুষ মারা হতে পারে বলে ন্যাটো উদ্বেগ জানালে রাশিয়া জাহাজটি স্পেনে ভেড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। বিবিসির প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংবাদদাতা জনথন মার্কাসের মূল্যায়ন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি রাশিয়া মনে করছে, পশ্চিমারা তাদের দমিয়ে রাখতে চায়। সে কারণেই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছেন। এ কারণেই ন্যাটো উদ্বিগ্ন হয়ে রাশিয়ার প্রভাব ঠেকাতে পোল্যান্ড এবং বাল্টিক অঞ্চলের তিন দেশ এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়ায় আগামী বছরের শুরুতে এক হাজার করে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়ার আশঙ্কা,
ক্রিমিয়ার মতো তাদেরও রাশিয়া আবার দখল করে নিতে পারে। আর পোল্যান্ডের মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে কালিনিনগ্রাদে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা স্থাপন করায় সে দেশটিও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। ন্যাটোর প্রধান স্টোলটেনবার্গ বিবিসিকে বলেন, ন্যাটোর তৎপরতা রাশিয়ার সঙ্গে বিবাদে জড়ানোর জন্য নয়। ন্যাটোকে সমন্বিত প্রতিরক্ষার স্বার্থেই এটি করতে হবে। তিনি বলেন, ন্যাটো রাশিয়ার সঙ্গে আরও ‘সহযোগিতা ও গঠনমূলক সম্পর্ক’ গড়তে চায়। ন্যাটোর পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে, তাদের ধারণা রাশিয়া তার পশ্চিম সীমান্তে ৩ লাখ ৩০ হাজার সেনা মোতায়েন রেখেছে। এদিকে সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, শীতল যুদ্ধের পর থেকে পূর্ব ইউরোপে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতির আয়োজন করছে পশ্চিমা দেশগুলো। যুক্তরাজ্য বলেছে, আগামী বছরের প্রথম চার মাসের মধ্যেই রোমানিয়ায় বিমানবাহিনীর টাইফুন যুদ্ধবিমান পাঠানো হবে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্যালোন বলেছেন, এস্তোনিয়ায় তাঁরা ৮০০ সেনা পাঠাচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.