বিনিয়োগ উন্নয়ন আইন আজ কার্যকর হচ্ছে

দেশের বহুল আলোচিত বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আইন আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে। এই আইনের আওতায় একত্রিত হবে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন ও বিনিয়োগ বোর্ড। এই দুই সংস্থা মিলে নাম দেয়া হয়েছে (বিডা)। দুটি লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে এই আইন করেছে সরকার। প্রথমত, বেসরকারি খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করা; দ্বিতীয়ত, সরকারি খাতে শিল্প-কারখানার জন্য অব্যবহৃত ভূমির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইনটির কার্যকর বাস্তবায়ন দরকার। জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে দেশে মূল সমস্যা বিনিয়োগ সংকট। গত অর্থবছরে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। টানা কয়েক বছর পর্যন্ত এই হার ২২ শতাংশের মধ্যেই আটকে রয়েছে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এই বৃত্ত ভাঙতে হবে। তিনি বলেন, প্রাইভেটাইজেশন কমিশন এবং বিনিয়োগ একত্রিত হওয়ায় বিনিয়োগের খরা কাটবে এই নিশ্চয়তা নেই। তবে আইন করার পর বিনিয়োগ বাড়াতে আইনটির কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি। জানা গেছে, ২৫ জুলাই কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সংসদে বিডা বিল-২০১৬ উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। এরপর ১ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বিলে স্বাক্ষর করলে তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
নতুন আইনের বিধান অনুযায়ী, বিনিয়োগ বোর্ড এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের অধীনে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী বিডায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। আর দুটি সংস্থার সব সম্পত্তি ও দায় বিডার মালিকানায় অর্পিত হবে। আইনটি কার্যকর হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান ও অর্থমন্ত্রীকে ভাইস চেয়ারম্যান করে বিডার ১৭ সদস্যবিশিষ্ট গভর্নিং বোর্ড গঠন করা হবে। বাণিজ্য, শিল্প, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের মতো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা এ বোর্ডের সদস্য হবেন। তাছাড়া শিগগিরই সরকার একজন নির্বাহী চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে নির্বাহী কমিটির ছয়জন সদস্য নিয়োগ দেবে। এছাড়া কোনো অনুমোদিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান এই আইন ভঙ্গ করলে ওই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বাতিল হবে বলে আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কিত ধারায় বলা হয়েছে- বিনিয়োগ বোর্ড এবং বেসরকারিকরণ কমিশন উভয়ই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করা প্রশাসনিকভাবে সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী। বিনিয়োগ উন্নয়ন পরিবেশ সৃষ্টি ও সরকারি মালিকানাধীন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের ভূমির অধিকতর দক্ষ ব্যবহারের সুযোগ বাড়াতে লক্ষ্যে সামগ্রিক বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সূত্র জানায়, দুই প্রতিষ্ঠান একত্রিত করতে ২০১৪ সালের মার্চে কেবিনেট সচিবকে চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মঈন উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সুপারিশের আলোকে আইনটি তৈরি করা হয়। ৩৬টি ধারা বিশিষ্ট আইনের কিছু ধারার উপধারা রয়েছে। আইনে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের সরাসরি বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়ায় শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করতে পারবেন। কোম্পানির নিবন্ধন প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য কার্যক্রম সহজী করতে কর্তৃপক্ষকে অধিকতর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন এবং সংস্কারের কার্যক্রমের জন্য কর্তৃপক্ষকে আরও শক্তিশালীকরণের প্রস্তাব রয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি করণের ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণ আরও সহজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বেসরকারি খাতে দ্রুত শিল্পায়নে দেশী-বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা এবং আন্তঃমন্ত্রণালয়ে ওয়ান স্টপ সার্ভিস কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে। আইনে বেসরকারি শিল্প স্থাপনে এলাকা এবং খাতভিত্তিক তফসিল এবং বিশেষ সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জমি ইজারা এবং শেয়ার হস্তান্তরের সুযোগ রাখা হয়েছে।
নিবন্ধিত কোম্পানির উন্নতি-অবনতি পর্যালোচনা করে পরামর্শের দেয়ার ক্ষমতা থাকছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের উপযোগিতা এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গবেষণার বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে। এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করার বিধান রয়েছে। বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ কিন্তু সরকারি কোনো কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত নয়, এমন ব্যক্তিকেও কমিটিতে সম্পৃক্ত করে বিনোয়োগের পরিবেশ উন্নয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষে। জানা গেছে, বেসরকারি বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিনিয়োগ বোর্ড কাজ করছে। বিনিয়োগ বোর্ডের বিরুদ্ধে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দীর্ঘসূত্রতাসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে উদ্যোক্তাদের। ফলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না। অন্যদিকে অলাভজনক ও লোকসানি সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি মালিকানায় হস্তান্তরের মাধ্যমে সরকারি ব্যয় কমানোর জন্য ১৯৯৩ সালে প্রাইভেটাইজেশন কমিশন গঠন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.