সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি

সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে একের পর এক যেভাবে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটছে, এতে যে কোনো সচেতন মানুষের উদ্বেগ বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। মাত্র কয়েকদিন আগে ফ্রান্সে যেভাবে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, এতে বিশ্ববাসী কেবল যে হতবাক হয়েছে তাই নয়, সন্ত্রাসের ধরন যে এমন হতে পারে, এটা মানুষ কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। গত শুক্রবার জার্মানির মিউনিখ শহরে আবারও নতুন করে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটল। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে আমরা জেনেছি, শুক্রবার সন্ধ্যায় মিউনিখ শহরের একটি ব্যস্ততম বিপণিবিতানে হামলা চালিয়ে ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অনেকে। দেশটির আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ হামলা সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেনি। ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি হামলাকারী আত্মহত্যা করেছে। এ ধরনের আত্মহত্যার নেপথ্যের কারণ খুঁজে বের করা জরুরি। সম্প্রতি একের পর এক যেভাবে সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে, এসব ঘটনা প্রতিরোধে কী করণীয়, এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী নানামুখী আলোচনা চলছে। স্বাভাবিকভাবে ধারণা করা যায়,
গতানুগতিক অভিজ্ঞতা দিয়ে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার নেপথ্যের কারণ খুঁজে বের করা কঠিন হতে পারে। যেহেতু সন্ত্রাসীরা একের পর এক নতুন কায়দায় হামলা চালায়, এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী জনগণের উচিত হবে সন্ত্রাসবিষয়ক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী কর্মসূচি আরও জোরদার করা। এ কথা ঠিক যে, এ ধরনের হামলা প্রতিরোধে সাময়িক কোনো পদক্ষেপ হয়তো বিশেষ কোনো ফল দেবে না। যেহেতু নতুন নতুন কায়দায় সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে, সেহেতু ধারাবাহিক সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা হলেই সন্ত্রাসীদের কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে। মানুষ কেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়, এ বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। এ বিষয়ক গবেষণা আরও জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা পদ্ধতিকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। সব স্তরের শিক্ষায় দর্শন চর্চা আরও জোরদার করতে হবে। অর্থাৎ প্রতিটি শিক্ষিত মানুষ যাতে উন্নত নৈতিকতা চর্চায় বিশেষভাবে মনোযোগী হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশ্ন হতে পারে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় যারা শিক্ষিত নন, তাদের উন্নত নৈতিকতার চর্চার উপায় কী?
এ প্রশ্নটির জবাব হচ্ছে- প্রতিটি পরিবারেই উন্নত নৈতিকতা চর্চার যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে এ বিষয়ে কাক্সিক্ষত ফল পেতে অনিশ্চতা দেখা দিতে পারে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। সন্ত্রাসীরা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করছে। কাজেই প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারের পাশাপাশি সন্ত্রাসীরা যাতে এর অপব্যবহারে সফল হতে না পারে সে ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। কোনো সন্ত্রাসী প্রযুক্তির অপব্যবহারের উদ্যোগ নিলে তা প্রতিরোধের কাজটি সহজ নয়। তাই কোনো ব্যক্তি যাতে প্রযুক্তিকে জনগণের অকল্যাণে ব্যবহার করতে উদ্যোগী না হয়, তা নিশ্চিত করাই জরুরি। প্রতিটি প্রযুক্তিই যে মানুষের কল্যাণের জন্য আবিষ্কৃত হয়েছে এ ব্যাপারে ব্যাপক জনমত তৈরি করতে হবে। সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, নানারকম হতাশার কারণে কোনো কোনো তরুণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে। এসব তরুণের হতাশার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।
এ বিষয়ক কোনো সমস্যার সন্ধান পাওয়া গেলে তার সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। যেহেতু সন্ত্রাসবাদের সমস্যাটি বৈশ্বিক, এর সমাধানে বিশ্বের সব দেশকে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। ইতিহাস, ঐতিহ্য, দর্শন ও মানব কল্যাণের মূল বাণীর সঙ্গে সব মানুষকে, বিশেষভাবে তরুণদের পরিচিত করানোর জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিলে উল্লিখিত সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক ফল মিলবে, এটাই আশা করা যায়। উল্লিখিত সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আরও কী করণীয় তা খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। এককভাবে কোনো দেশ বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এর সমাধান করা সম্ভব নয়। এ সমস্যার সমাধানে করণীয় নির্ধারণে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এটা স্পষ্ট যে, এ সমস্যার সমাধানে ধারাবাহিক তৎপরতা অব্যাহত না থাকলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না। আমাদের এই পৃথিবীকে সবার বাস উপযোগী রাখার জন্য যা কিছু করণীয়, তা সবাইকে মিলেই করতে হবে।
আসফাকুর রহমান : আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক, সাবেক রাষ্ট্রদূত

No comments

Powered by Blogger.