প্রথম থেকেই ত্রাণের প্রস্তুতি নিন

বন্যা আসে, সঙ্গে আসে দুর্ভোগ। উত্তরের কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে বইছে। পূর্বের সুরমা নদীর প্লাবনও চলছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা এবার মাঝারি মাত্রার বন্যার পূর্বাভাস দিচ্ছেন। বন্যার সঙ্গে বসবাসে জনগণকে অভ্যস্ত করার পাশাপাশি বন্যাবাহিত প্রতিকূলতা ঠেকানোয় সরকারি বন্দোবস্তটাই এখন করণীয়। প্রথমআলোর শনিবারের সংবাদ জানাচ্ছে, চিলমারি, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর ও সুনামগঞ্জে মাঝারি মাত্রার বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কুড়িগ্রামের ৪৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। গত দুই দিনেই কয়েক শ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বিদ্যালয়ও। সিরাজগঞ্জের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
এসব এলাকার ত্রাণ কার্যক্রমে স্থানীয় সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর সক্রিয়তাও জরুরি। বাংলাদেশের জন্য বন্যা একই সঙ্গে আশীর্বাদ ও অভিশাপ। আশীর্বাদ এ জন্য যে এতে দেশের জলদেহ নতুন পানিতে নবায়িত হয়। এটা কৃষি ও পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী। দ্বিতীয়ত, বন্যার পলি ও নতুন পানি মাটি ও পানির দূষণ কমায়। কিন্তু দরিদ্রদের পক্ষে বন্যার সময়টায় জীবনধারণ অমানবিক পর্যায়ে পৌঁছে  এ জন্য বরাবরের মতো বাঁধ, উঁচু সড়ক এবং বিদ্যালয়, কমিউনিটি সেন্টার ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খুলে দিতে হবে। শুকনা খাদ্য, খাওয়ার স্যালাইন এবং ডায়রিয়া ও জ্বরজারির ওষুধের ব্যবস্থা করতে হবে। গৃহপালিত পশুপাখিগুলোর সুরক্ষার দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন।
পানি নেমে যাওয়ার পরে কৃষি, অর্থনৈতিক কাজকারবার, যোগাযোগ, পড়ালেখা পূর্ণোদ্যমে চালু করার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। বন্যার পরে যাতে ডায়রিয়া বা পানিবাহিত রোগ ছড়াতে না পারে, তার দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগের। প্রতিবছর বাঁধগুলো কেন ভাঙে, তারও সুরাহা হওয়া চাই। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজে দুর্নীতি খুবই পরিচিত ব্যাপার হলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। জবাবদিহিহীনতার এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যদিকে বাস্তবতা হচ্ছে, ত্রাণের সামগ্রী বারোভূতে খেয়ে ফেলে। সরকারযন্ত্রের গাফিলতিও সুবিদিত। এ কারণে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেই বন্যা মোকাবিলার সার্বিক কার্যক্রমের তদারকি হওয়া চাই।

No comments

Powered by Blogger.