কাশ্মীরে ২৬ বছরে ৮ হাজার গুম

কনকনে শীতের মধ্যে কাশ্মীরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাঠের তৈরি একটি ঝুঁপড়ি ঘরে বসে আছেন বেগম জান (৩৮)। দশ সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ও বিষন্নতায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি। অপেক্ষা করছেন তার নিখোঁজ স্বামীর সংবাদ শোনার জন্য। গত নভেম্বরে হারিয়ে যাওয়ার পর এখনো জানেন না কী ঘটেছে তার ভাগ্যে। বেগম জানের স্বামী গোলাম জিলানি খাতানাকে (৪২) ভারতীয় সেনাবাহিনী গুম করেছে বলেই আশংকা করছেন তার পরিবার। জান জানান, স্বামী ফিরে আসার কোনো আশাই তিনি করতে পারছেন না। সেনাবাহিনী যদি নিয়ে থাকে, তবে তাকে মেরেই ফেলেছে। গোলাম জিলানির মতো আরও অনেকেই গুম হয়ে গেছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা এএফপি। হিমালয় কোলঘেঁষা মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরে যখন থেকেই ভারতীয় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে,
তখন থেকেই হত্যা-গুম ও নির্যাতনের শিকার সেখানকার অধিবাসীরা। কয়েক দশক ধরে সাজানো বন্দুকযুদ্ধ, বিক্ষোভ দমন, আর পাকিস্তানি অনুচর প্রতিরোধের নামে কাশ্মীরিদের হত্যা করে আসছে ভারত। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৮ হাজার কাশ্মীরি গুম হয়ে গেছে। এদের অধিকাংশই তরুণ। তারা আর কখনো ফিরে আসেনি। এএফপির অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাশ্মীরিদের হত্যা করলে ভারতীয় সেনাসদস্যরা সরকারের কাছ থেকে অর্থপুরস্কার ও পদোন্নতি পেয়ে থাকে। ২০১০ সালে ভারতীয় সেনা সদস্যরা পাকিস্তানি জঙ্গি আখ্যা দিয়ে হত্যা করে। ওই তিন তরুণের মৃত্যুতে কাশ্মীরব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিক্ষোভ দমনে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে ১২০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পরবর্তীতে এক বিরল পুলিশি তদন্তে জানা যায়, ওই তিন তরুণকে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে ইচ্ছা করেই হত্যা করেছিল সেনাসদস্যরা।

No comments

Powered by Blogger.