কে ভারতকে স্বাধীন করেছেন, গান্ধী না বসু?

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর গোপন নথি প্রকাশের পর ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জনক নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। সদ্য প্রকাশিত বিভিন্ন নথির সূত্র ধরে বলা হচ্ছে, ভারতে স্বাধীনতা এসেছিল নেতাজির কারণে, মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের জন্য নয়। নেতাজির গোপন নথি কেন এতদিন কংগ্রেস ও তার পরবর্তী সরকারগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে- তা হল ভারতে এতদিন যে ইতিহাস পড়ানো হয়েছে তা নতুন করে লিখতে হতে পারে।
এতে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ লাগতে পারে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর। এ কারণে নেতাজির গোপন নথিগুলো প্রকাশ করেনি ভারত সরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সদ্য প্রকাশিত গোপন নথি থেকে জানা যাচ্ছে, গান্ধীর অহিংস আন্দোলনে ভারতের জন্ম হয়নি। ভারতের জন্ম হয়েছে নেতাজি আজাদ হিন্দ ফৌজের কর্মকাণ্ডের জন্য। ব্রিটিশদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল নেতাজির সামরিক কর্মকাণ্ড। ব্রিটিশদের পতাকাতলে থাকা ভারতীয় সৈন্যরা যে কোনো সময় বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারে। এ সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছিল সেদিন। যে কারণে ব্রিটিশ সরকার ভারতকে স্বাধীন ঘোষণা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নেতাজি বিশেষজ্ঞ ও সামরিক ইতিহাসবিদ জেনারেল জিডি বকশির লেখা একটি বই এ বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছে। ‘বোস : এন ইন্ডিয়ান সামুরাই’ নামের ওই বইটি এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে বইয়ের অংশবিশেষ তুলে ধরেছে মেইল টুডে নামক একটি দৈনিক। ওই বইয়ে লেখক সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমন্ট এটলির নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিষয়ক মন্তব্য তুলে ধরেছেন। ১৯৫৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক গভর্নর পিবি চক্রবর্তীর সঙ্গে ক্লেমন্ট এটলি কথোপকথন টেনে আনেন তিনি। কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ও পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর পিবি চক্রবর্তী ইতিহাসবিদ আরসি মজুমদারের বই ‘এ হিস্টরি অব বেঙ্গলে’র প্রকাশককে এক চিঠিতে ওই কথোপকথন লিখে জানিয়েছিলেন। ক্লেমন্ট এটলি ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা সিদ্ধান্তের দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন। সেদিন তিনি কলকাতার পিবি চক্রবর্তীর গেস্ট হাউসে রাত কাটিয়েছিলেন। পিবি চক্রবর্তী বলেন,
‘আমি ক্লেমন্ট এটলিকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘কী কারণে আপনারা এত দ্রুত ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন?’ তিনি আমাকে বলেন, ‘নেতাজির সামরিক কর্মকাণ্ডের কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর মধ্যে ব্রিটিশ রাজের প্রতি বিদ্রোহ দানা বাঁধছে। তারা আর অনুগত থাকছে না।’ আমি আরও জানতে চাইলাম, ভারত ছাড়ার পেছনে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের ভূমিকা কতটুকু?’ এটলি ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের হাসি টেনে বললেন, মি-নি-মা-ল (সা-মা-ন্য)। মেইল টুডে আরও জানায়, ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় রয়াল নৌবাহিনীর ২০ হাজার নাবিক বিট্রিশ রাজত্বের প্রতি আনুগত্যহীনতা প্রকাশ করেছিল। নেতাজির প্রতিকৃতি নিয়ে তারা মুম্বাইয়ে গিয়ে ‘জয় হিন্দ’ বলে স্লোগানও দিয়েছিল। নৌবাহিনীর জাহাজগুলো থেকে যুক্তরাজ্যের পতাকাও নামিয়ে দিয়েও বিদ্রোহ প্রকাশ করেছিল তারা। জাবালপুরে একই ধরনের বিদ্রোহ দেখিয়েছিল রয়াল ভারতীয় বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ১৯৪৬ সালের সামরিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী সে সময় ভারতে ব্রিটেনের ৪০ হাজার সেনা ছিল। তবে সবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। এসব সেনা দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সেনাবাহিনী থেকে ২৫ লাখ ভারতীয় সেনাকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। এসব সেনাদেরও ভয় পাচ্ছিল ভারতে অবস্থানরত ব্রিটিশ সেনারা। আর ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে এসব বিদ্রোহের বীজ বপন করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।

No comments

Powered by Blogger.