কেমন আছেন ফখরুল by কাফি কামাল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। ভদ্র ও সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে নানা মামলায় বারবার কারাভোগ করেছেন তিনি। সর্বশেষ চলতি বছর কারাবন্দি অবস্থায় তিনি কয়েকটি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ ও উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে তিনি বিদেশে চিকিৎসাধীন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের একাধিক হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাকে নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। তারপরও প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরতে পারেন তিনি। ১৮ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা রয়েছে তার। সেখানে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেশে ফিরতে পারেন তিনি।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে তিনি অন্তত ৪ দফায় কারাভোগ করেছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে টানা ৬ মাস কারাভোগ করেছেন তিনি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মির্জা আলমগীর ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে দুই দফায় ৪ দিনসহ চারদফায় ১২ রিমান্ডে ছিলেন। পুলিশ একবার ৩০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এ সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেও সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হন। হার্টের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছয় মাসে তার ১২ কেজি ওজন কমে যায়। শেষে আদালতের নির্দেশে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। সে বোর্ডের সুপারিশেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৭শে জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। জামিনে মুক্তির পর তিনি প্রথমে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে সিঙ্গাপুর যান। সিঙ্গাপুরে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল, মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল ও রান্দালস হাসপাতালে ড. বিজয় শর্মা, ড. মনিশ শর্মা ও ড. মরিম চু–-এর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেন। পরিকল্পনা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি অস্ট্রেলিয়া যাবেন। সে জন্য অস্ট্রেলিয়ার ভিসাও যোগাড় করেছিলেন। কিন্তু সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা তাকে জানান, তিনি যে রোগে ভোগছেন তার উন্নত চিকিৎসা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। পরে তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টে তিনি ১১ই আগস্ট সিঙ্গাপুর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে নিউ ইয়র্কের কর্নেল হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. ফিলিপ ই. স্টেইগ, ডা. কাই, ডা. জন পাইল স্পেলম্যান ও ডা. ওসকার লেবিউলের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে। শারীরিক একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত কর্নেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেনÑ মির্জা আলমগীর জটিল সেরিব্রো ভাসকুলার (মস্তিষ্কের ধমনীর রক্ত সঞ্চালন বন্ধ) রোগ ও ইন্টারনাল করোটিড আর্টারিতে ব্লকে আক্রান্ত। তার হৃৎপি- থেকে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের দুটি ধমনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সাধারণত অত্যাধিক মানসিক চাপে এমন রোগের উদ্ভব হয়। এছাড়াও তিনি আইবিএসের সমস্যা, দাঁতের ব্যথায় ভুগছেন।
চিকিৎসকদের বরাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জানান, চিকিৎসকরা প্রথমে অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিন্তু তার বর্তমান শারীরিক নাজুক পরিস্থিতির কারণে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এমন অবস্থায় কর্নেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আগামীকাল ১৪ থেকে ১৬ই সেপ্টেম্বর টানা তিনদিন চিকিৎসকদের সঙ্গে তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে। ফলে এখনই মির্জা আলমগীরের চিকিৎসা শেষ হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হওয়া রোগের জন্য তাকে দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা নিতে হবে। আপাতত চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরতে পারবেন। তবে চিকিৎসার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য তাকে নিয়মিত হাসপাতালে যাতায়াত করতে হবে। এছাড়া মির্জা আলমগীরকে ইন্টারনাল করোটিড আর্টারিতে ব্লকেরও চিকিৎসা নিতে হবে। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের জন্য প্রাণ টানে মির্জা আলমগীর। সবকিছু ঠিকমতো হলে প্রথমদফা চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতার পরও তিনি আশাবাদী, দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে বলিষ্ট ভূমিকা রাখবেন। বাংলাদেশে এক সময় গণতন্ত্র ফিরে আসবে। এ জন্য দেশবাসী, সকল স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে দোয়া কামনা করেছেন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, ভদ্র ও সজ্জন এ মানুষটিকে আন্দোলন চলাকালে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় মাসের পর মাস কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। যেসব ঘটনার সঙ্গে মির্জা আলমগীরের জড়িত থাকা সম্পর্কে দেশের মানুষের বিস্তর মতবিরোধ রয়েছে। নেতাকর্মীরা বলেন, হাইকোর্ট থেকে জামিন ও প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পাবার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তিনি মানুষের জন্য কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। একজন ইতিবাচক রাজনীতিক হিসেবে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একজন সৎ, শিক্ষিত, ভদ্র, সজ্জন ও নিবেদিতপ্রাণ নেতা। ইমেজ সঙ্কটে পড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে তিনি ইমেজ উদ্ধারে অনেক ভূমিকা রেখেছেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের সাম্প্রতিক আন্দোলনগুলোকে কেন্দ্র করে অনেক নৈরাজ্য হলেও ব্যক্তিগতভাবে তিনি শান্তিপ্রিয় মানুষ। ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পর নানা রাজনৈতিক তিক্ততার মধ্যেও গণতান্ত্রিক শাসনের সময় সাধারণত প্রধান বিরোধী দলের মহাসচিবকে কখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। কিন্তু মির্জা আলমগীরের ক্ষেত্রে কেবল গ্রেপ্তারই নয় রিমান্ডের নজির তৈরি হয়েছে। রাজনীতির মাঠ থেকে কোণঠাসা ও কারাগারে আটকে রাখায় সরকারের এক হিসেবে বোকামি প্রকাশ পেয়েছে। এতে রাজনীতিকরা রাজনীতিতে অনাগ্রহী হবেন।

No comments

Powered by Blogger.