জয়পুরহাটের আ.লীগ রাজনীতি: নাশকতা মামলার আসামিদের নিয়ে দলে অসন্তোষ by আসাদুল ইসলাম

জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে নয় মাস আগে। কিন্তু এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এ নিয়ে পদপ্রত্যাশী অনেকের মধ্যে হতাশা রয়েছে। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীকে আওয়ামী লীগে নেওয়াকে কেন্দ্র করে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত জামায়াত ও বিএনপির দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মী ও ক্যাডার আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। অন্তত ৫০ জন আছেন নাশকতার মামলার আসামি। অনেকে আছেন অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। এর মধ্যে পাঁচবিবি উপজেলা জামায়াতের রোকন আবদুস সালাম আওয়ামী লীগে যোগদান অনুষ্ঠানে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতার ১০টি মামলা রয়েছে। সাতটি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
আবার কালাই উপজেলায় যুবলীগ নেতা সবুজ হোসেন হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ও জামায়াত-শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার উজ্জ্বল হোসেন যোগ দিয়েছেন যুবলীগে। তিনি তাঁর বাড়ির কাছে খঞ্জনপুর-পাহাড়পুর সড়কের তেঁতুলতলীতে যুবলীগের একটি কার্যালয়ও তৈরি করেছেন।
এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের পুরোনো নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করলেও কেউ গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি নন। তাঁদের শঙ্কা, এ বিষয়ে কথা বললে জেলা কমিটিতে তাঁদের ঠাঁই না-ও হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, জয়পুরহাটের বিভিন্ন থানায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পরে বিভিন্ন নাশকতার অভিযোগে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৯৪টি মামলা হয়। এসব মামলায় বিপুলসংখ্যক ‘অজ্ঞাতনামা’ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। ফলে পুলিশ চাইলে যে কাউকে ওই অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে পারে। এ অবস্থায় মামলা ও পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচতে এজাহারভুক্ত আসামির বাইরেও জামায়াত ও বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে আশ্রয় নিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা আছে তাঁরা তা আইনগতভাবে মোকাবিলা করবেন। আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কারণে কোনো সুবিধা তাঁরা পাবেন না।’ তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত থেকে যাঁরা যোগ দিয়েছেন, তাঁদের তিন বছর পর্যন্ত কোনো কমিটিতে রাখা হবে না।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি খাজা শামসুল আলম বলেন, ‘নতুন যোগদানকারীদের অধিকাংশই নাশকতার মামলার আসামি এবং বিতর্কিত। তাঁদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পারলে দলের জন্য ভালো হবে।’ তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় আওয়ামী লীগে কিছুটা স্থবিরতা আছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১০ বছর পর ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি পদে সাংসদ সামছুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক পদে এস এম সোলায়মান আলী পুনরায় নির্বাচিত হন। বাকি পদগুলোতে কাউকে নির্বাচিত করা হয়নি। এরপর নয় মাস পার হলেও পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি হয়নি।
অবশ্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান প্রথম আলোকে বলেন, সৎ, ত্যাগী ও সাংগঠনিকভাবে দক্ষতাসম্পন্ন নেতা-কর্মীদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটির একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগির তা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.