অবৈধ পারাপার রোধে ‘এন্ট্রি ভিসা’র প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে -সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি প্রধান

বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ পারাপার রোধে স্বল্পমেয়াদি ‘এন্ট্রি ভিসা’ চালুর জন্য ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) প্রস্তাব দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সদ্য সমাপ্ত সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। রোববার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবির সদর দপ্তরে এ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ২ থেকে ৬ আগস্ট ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা বন্ধ, ফেলানী হত্যার বিচার, বাংলাদেশের অরক্ষিত সীমান্তে চৌকি (বিওপি) নির্মাণ, চোরাচালান রোধ প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়।
বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, সম্মেলনে ভারতীয় কর্মকর্তারা দাবি করেন, প্রতিবছর প্রচুরসংখ্যক বাংলাদেশি ভারতে অবৈধ অভিবাসন করছেন। এই দাবি নাকচ করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ। দেশের আর্থিক, সামাজিক সূচকগুলো উন্নতির দিকে। উল্টো অনেক ভারতীয় বাংলাদেশে কাজ করছেন এবং প্রতিবছর তাঁরা পাঁচ থেকে ছয় বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স ভারতে পাঠান। তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে বাংলাদেশিদের ভারতে মাইগ্রেট করার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। বরং বেশির ভাগ লোক চিকিত্সার প্রয়োজনে বা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে যান। ভারতের ভিসা পাওয়ার জটিলতার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। এন্ট্রি ভিসা চালু করলে এ ধরনের পারাপার কমে যাবে।’
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘ভারতে গরু রপ্তানির বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টির অনুমোদন দিতে পারে না। আমরাও আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে তাদের কোনো অনুরোধ করতে পারি না। বিষয়টি যেভাবে দেখা দরকার, তারা সেভাবে দেখবে। তবে আমার কথা হচ্ছে, কোনো বাংলাদেশি যেন গরু আনতে সীমান্ত অতিক্রম না করেন। কারণ, এভাবেই বেশির ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।’ তিনি বলেন, ফেলানী হত্যা মামলার রায় বিএসএফের মহাপরিচালক এখনো অনুমোদন করেননি। তাঁরা বলেছেন, ফেলানীর পরিবার এই রায়ে সংক্ষুব্ধ হলে তা বিএসএফকে জানালে তাঁরা নতুন বিচারকদের সমন্বয়ে আদালত গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম চালাবেন।
সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বিএসএফকে আবারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বিএসএফ যুক্তি দিয়েছে, চোরাকারবারিদের হামলায় তাদের দুই সদস্য নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছেন। এরপরও তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সীমান্তে ধৈর্য ধরে পাহারা দিতে বলা হয়েছে।’ বিজিবি মহাপরিচালক মনে করেন, সীমান্ত হত্যা কমছে। তিনি বলেন, ‘গত বছর ৪০ জন নিহত হয়েছেন, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২৬ জন মারা গেছেন বলে তথ্য রয়েছে। এতে আমরা সন্তুষ্ট নই।’
বিজিবি প্রধান বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৩৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে গত কয়েক বছরে মাত্র ১১০ কিলোমিটার সুরক্ষিত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ৪২৯ কিলোমিটার সুরক্ষিত করার জন্য ১০৭টি বিওপি স্থাপন করা প্রয়োজন। বিএসএফ সেই বিওপি স্থাপনের জন্য সর্বাত্মক সহায়তা দিতে চেয়েছে।
সম্মেলন শেষে ৭ আগস্ট ভারতের টেকনপুরে বিএসএফ প্রশিক্ষণ একাডেমিতে কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে অভিবাদন গ্রহণ করেন বিজিবি মহাপরিচালক। বিএসএফের কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে কোনো বিদেশিকে আমন্ত্রণ জানানোর ঘটনা এটাই প্রথম বলে বিজিবি থেকে জানানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.