লন্ডনে বসে অপমান করবে, সেটা হবে না: প্রধানমন্ত্রী by তবারুকুল ইসলাম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে
নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ছবি: ফোকাস বাংলা
যুক্তরাজ্য সফরকালে স্থানীয় বিএনপির বিক্ষোভে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তিনি বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ডেমোনস্ট্রেশন (বিক্ষোভ) কীসের জন্য? স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন করেছি তার প্রতিবাদে? সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি তার প্রতিবাদে? লন্ডনে বসে অপমান করবে, সেটা হবে না।’
গতকাল রোববার লন্ডনের পিকাডেলির পার্ক লেইন শেরাটন হোটেলে এক সংবর্ধনায় বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বাংলাদেশে স্বৈরাচারের পতন, গণতন্ত্রায়ণ, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে অবদান এবং সর্বশেষ ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তির সফল বাস্তবায়নের সম্মাননা হিসেবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ওই সংবর্ধনার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়ার সময় ওই হোটেলের সামনে যুক্তরাজ্য বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী বিক্ষোভ করেন। মাথায় কালো কাপড় বেধে ব্যানার ও পোস্টার নিয়ে নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করেন। পুলিশ এ সময় বিক্ষোভকারীদের ঘিরে রাখে। নিরাপত্তা বেষ্টনী মধ্যে বিএনপির বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এর আগে গত শুক্রবার এবং শনিবার প্রধানমন্ত্রী যে হোটেলে অবস্থান করছেন (পশ্চিম লন্ডনের হিলটন পার্ক লেইন) তার সামনেও একইভাবে বিক্ষোভ করেছে বিএনপি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে আমাদের যেমন ন্যাচারাল ক্যালামিটিজ (প্রাকৃতিক দুর্যোগ) আছে, সেইসঙ্গে আমাদের ম্যান মেইড ক্যালামিটিজও (মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগ) আছে। দুটোই আমাদের মোকাবিলা করতে হয়। জ্বালাও, পোড়াও, খুন, হত্যা-আর তার মূল হোতা তো এখানেই বসে আছে’।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কীসের এত তোষামোদি? ’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেন, এতিমের অর্থ যারা চুরি করে খেয়েছে, বাসে আগুন দিয়ে যারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে এবং যারা হুকুম দিয়ে এগুলো করিয়েছে, তাদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবে।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে একটি মানপত্র পড়েন প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল ও ক্রেস্ট উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত প্রশংসা পাওয়ার যোগ্যতা তাঁর নেই। তিনি বলেন, ‘বাবার কন্যা হিসেবে আমি গর্বিত। কারণ আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমার এর চাইতে বড় কিছু পাওয়ার নেই’।
১৯৭৫ ও ২০০৭ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় তাঁর প্রতি যুক্তরাজ্যপ্রবাসীদের ভালোবাসা ও অবদানের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য এখন তাঁর কাছে আরও আপন। কারণ তাঁর ভাগনি টিউলিপ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন কন্যা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় একজন বাঙালি হিসেবে তিনি গর্বিত।
বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় চার কোটি ৫৭ লাখ ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছে বাংলাদেশে। আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষার পাশাপাশি নিশ্চিত হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। নেপালে ভূমিকম্প দুর্গত মানুষদের তাৎক্ষণিকভাবে ১০ হাজার মেট্রিকটন চাল সহায়তা দেওয়া হয়েছে। নেপাল চাইলে বাংলাদেশ এক লাখ মেট্রিকটন চাল সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে বিরোধ মীমাংসা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অতীতের কোনো সরকার এমনটা কল্পনাও করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান এবং নেপাল যোগাযোগ ক্ষেত্রে যে সমঝোতা করেছে তা সবার জন্য উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
ভৌগোলিক অবস্থার কারণে বাংলাদেশের যে গুরুত্ব রয়েছে সেটিকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নতি করাই লক্ষ্য বলে জানান শেখ হাসিনা। দারিদ্র্যকে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অভিন্ন শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দারিদ্র্য মোকাবিলায় সবাইকে কাজ করতে হবে। শুধু নিজেদের কথা নয়। প্রতিবেশীদের কথাও ভাবতে হবে।
দেশের পাঁচ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৬০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্রের সংখ্যা ৭ ভাগে নেমে এসেছে। এসব বিষয়ে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন প্রকাশ হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গৃহহীন, ভূমিহীন কোনো মানুষ থাকবে না। এ ব্যাপারে প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নির্দেশ দেওয়া আছে। গৃহহীন, ভূমিহারা মানুষ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁদের সরকারি অর্থে বাড়ি করে দেবেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ভাগনি টিউলিপসহ উপস্থিত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি লেবার দলের মাইক গ্যাপস, জো স্টিভেনস, ওয়েস স্ট্রিটিং ও কনজারভেটিভ দলের এমপি পল স্কালির হাতে ফুলের তোড়া ও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ইংরেজি সংস্করণ তুলে দিয়ে অভিনন্দন জানান। এ সময় টিউলিপ বলেন, ‘কখনো ভাবিনি এ রকম একটি অনুষ্ঠানে নিজের খালার হাত থেকে ফুল নেব। আপনাদের দোয়া ও সমর্থন ছাড়া আমি ব্রিটিশ এমপি হতে পারতাম না।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

No comments

Powered by Blogger.