আইএসকে হারাতে ‘কয়েক বছর’ লাগবে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের
সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বিভিন্ন আরব দেশের
প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব দেশ ইরাক ও
সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিরোধী মার্কিন
নেতৃত্বাধীন বিমান হামলায় সহায়তা করছে। বৈঠকে
ইরাকের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এএফপি
আরব সহযোগীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের বেশ ক্ষয়ক্ষতি করেছে। তবে সহজে তাদের পরাজিত করা যাবে না বলে মানছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের এক মুখপাত্র মঙ্গলবার বলেছেন, এই লড়াই শেষ হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। এদিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট তুরস্ক সীমান্তের কাছে কুর্দি-অধ্যুষিত সিরীয় এলাকায় মঙ্গলবার রাতে কয়েক দফা বিমান হামলা চালিয়েছে। খবর বিবিসি ও এএফপির। তুরস্ক সীমান্তবর্তী সিরীয় শহর কোবানের আশপাশে নতুন বিমান হামলার খবরের মধ্যে লড়াইয়ের স্থায়িত্ব নিয়ে পেন্টাগন মুখপাত্রের ওই মন্তব্য এল। কুর্দি-অধ্যুষিত শহরটি কয়েক দিন ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে আইএস জঙ্গিরা। ওই এলাকার প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার বাসিন্দা এরই মধ্যে পালিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে। পেন্টাগনের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল জন কারবি ওয়াশিংটনে বলেছেন,
সিরিয়ায় চালানো বিমান হামলা এরই মধ্যে আইএসের সক্ষমতাকে সফলভাবে ‘কমিয়ে দিয়েছে’। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, যেখানে চেয়েছিলাম, ঠিক সেখানেই আঘাত করেছি।’ অবশ্য, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইএসও যে নতুন পথ খুঁজে নিতে ও প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম, সেটাও স্বীকার করেছেন পেন্টাগনের মুখপাত্র। তিনি বলেন, আইএস যে ‘মারাত্মক হুমকি’ সামনে নিয়ে এসেছে, তা কয়েক দিন বা মাসে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। কারবি বলেন, ‘এটা হতে যাচ্ছে একটা ব্যাপক প্রচেষ্টা, যেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে সবাই। আমরা মনে করি, এটা কয়েক বছরের বিষয় হবে।’ সিরীয় শহর কোবানের আশপাশে চালানো মঙ্গলবার মধ্যরাতের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল আইএসের অবস্থান ও সরবরাহ রুট। এ ছাড়া ইরাক সীমান্তের কাছেও দুই দফা বিমান হামলার কথা নিশ্চিত করেছে পেন্টাগন। সোমবার সিরিয়ায় প্রথম দিনের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আরব বিশ্বের অন্তত পাঁচটি দেশ সহায়তা করেছে। ওই হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল আইএসের শক্ত ঘাঁটি সিরীয় শহর রাকা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ওই শহরটির পাশাপাশি আরও কয়েকটি এলাকায় হামলা চালিয়ে আইএসের বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্র, যানবাহন ও সংরক্ষণাগার ধ্বংস করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এই বিমান হামলা আইএসের যোদ্ধাদের ওপরে বিরাট প্রভাব ফেলেছে। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, সিরিয়ার আলেপ্পো প্রদেশের একটি ভবনে বিমান হামলায় চার শিশুসহ অন্তত ১১ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ হামলার জন্য মার্কিন বাহিনীকে দায়ী করেছে স্থানীয় সরকারবিরোধীরা।
তবে এ বিষয়ে নিরপেক্ষ সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, আইএসবিরোধী লড়াইয়ে ৫০টিরও বেশি দেশ যোগ দিয়েছে। তিনি নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এই সন্ত্রাসীদের কোথাও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেতে দেব না।’ তুরস্কের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর কেরি বলেন, লড়াইয়ে আরব দেশগুলোর পাশাপাশি তুরস্কও যোগ দেবে। তবে তুরস্ক গতকাল বলেছে, তখন পর্যন্ত বিমান হামলায় তাদের বিমান কিংবা সে দেশে অবস্থিত মার্কিন বিমান ঘাঁটি ব্যবহৃত হয়নি। জাতিসংঘে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আইএসবিরোধী অভিযান: জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে নিউইয়র্কে যাওয়া বিশ্বনেতাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের বিষয়টি। অধিবেশনে ভাষণ দেওয়া প্রথম নেতাদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি এই অধিবেশনকে আইএসবিরোধী আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরালো করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। ওবামার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করার কথা, যেখানে ইরাক ও সিরিয়ায় বিদেশি জিহাদিদের প্রবেশ ঠেকাতে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হতে পারে। প্রস্তাবটিতে দেশে দেশে এমন আইন করার কথা বলা হয়েছে, যাতে ইরাক ও সিরিয়ায় জিহাদে যোগ দেওয়াকে মারাত্মক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.