‘জিয়াউর রহমান মরে বেঁচে গিয়েছেন’ -শেখ হাসিনা

প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের একজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি মরে বেঁচে গেছেন। বেঁচে থাকলে তাকে আসামি করতাম। গতকাল আওয়ামী লীগের যৌথ সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সন্ধ্যায় এ বৈঠকে যোগ দেন। এতে দলের উপদেষ্টা পরিষদ, কার্যনির্বাহী সংসদ ও দলীয় সংসদ সদস্যরা। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, আসন্ন বাজেট ও সাংগঠনিক পুনর্গঠন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এতে দলের নেতা ও এমপিদের সার্বিক বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া দলের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি  মোশ্‌তাক সেনাপ্রধান করে জিয়াকে । মোশ্‌তাক বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, তার মানে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়ার সম্পৃক্ততা আছে। তিনি হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের একজন ছিলেন। ’৭৫-এর পর তিনি বিচারপতি সায়েমকে ভয় দেখিয়ে নিজে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। এরপর তার পুরো সময়ে রাতে কারফিউ থাকতো। এটি চলে ’৮৬ সাল পর্যন্ত। তখন মানুষ বলতো দেশে কারফিউ গণতন্ত্র চলছে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া এমপিদের নিয়ে হাইকোর্টে করা রিট এবং এই রিটের কৌঁসুলি আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কিছু লোক আছে যারা এক সময় আমাদেরই দলেই ছিল- তারা এখন এই আনকন্টেস্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ’৭০ ও ’৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেয়া আসনে তিনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখন তিনি এই আনকন্টেস্টের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। এ সময় দলের নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা ভাল করে খোঁজ নেন। আমার যতটুকু মনে পড়ে তিনি দুইবারই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েছিলেন। আমরা আমাদের যেখানে প্রার্থী ছিল না সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েছেন। নির্বাচনের  বৈধতার প্রসঙ্গ এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে ৪০ ভাগ ভোট পড়েছে। এই ৪০ ভাগ ভোটের নির্বাচন যদি বৈধ না হয় তাহলে অস্ত্র ঠেকিয়ে যখন প্রেসিডেন্ট হলেন তখন কি তা বৈধ ছিল?
বাকস্বাধীনতা নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এ নিয়ে সমালোচনা করেন তাদের সেই সমালোচনাই তো প্রমাণ করে মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে। এই স্বাধীনতা কি রকম তা তো টিভি টকশো দেখলেই বোঝা যায়। যে যার মতো কথা বলছে। আমরা এতগুলো টেলিভিশন, মিডিয়া দিয়েছি। পাচ্ছি কি? সবাই আমাদের পিছে লেগে আছে। তবে তারা যার যার কথা বলুক, আমরা দেশের জন্য কাজ করে যাবো।
একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অনেক চিন্তাবিদ আছেন যারা উল্টা দিকে যাচ্ছেন। তারা কেয়ারটেকারের টেক কেয়ারে ছিলেন। আমাদের কাছে দেশের মানুষের গুরুত্ব আছে। উনাদের ও রকম নেই। উনাদের কোন কিছুতেই ভাল লাগে না। যদি কোন অসাংবিধানিক সরকার আসে ওটাই তাদের চিন্তা। আমরা বলেছি ৬ ভাগ প্রবৃদ্ধি হবে। তারা সব সময় নেতিবাচক বলে। কিন্তু দেশ তো সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গত নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর জন্য তারা মানুষ পুড়িয়ে মারলো। পুলিশ পুড়িয়ে মারলো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলো। কিন্তু নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। আমরা দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। এখন এই সেতুর কাজ শুরু করেছি। এর কাজ শেষ হবে। আমি বলেছিলাম দেশীয় অর্থেই সেতু করবো। দেশের অর্থেই সেতুর কাজ শুরু হচ্ছে।
সরকারের উন্নয়ন কাজ মিডিয়ায় প্রতিফলিত হয় না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, এটি মানুষকে জানাতে হবে। কোথায় কি হয়েছে তা বলতে হবে। উন্নয়নের কথা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে।
সভায় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, মোহাম্মদ নাসিম, সতীশ চন্দ্র রায়, সাহারা খাতুন, নূহ উল আলম লেনিন ও ইঞ্জিনিয়ার  মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর পাশে মঞ্চে ছিলেন। সূচনা বক্তব্যের পর দলের নেতা ও এমপিদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে সাম্প্রতিক সময়ে গুম-খুনের ঘটনা, দলীয় কোন্দল ও সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়। এসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন দলীয় সভানেত্রী।

No comments

Powered by Blogger.