ক্রিমিয়ার ভাগ্য নির্ধারণের রায়

ক্রিমিয়া : ইউক্রেন সংকটের কেন্দ্রবিন্দু
রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে গতকাল রোববার রায় দিয়েছে ইউক্রেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ক্রিমিয়ার জনগণ। গণভোটের ফল আজ সোমবার ঘোষণা করা হতে পারে। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষেই ক্রিমিয়ার জনগণ রায় দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গণভোটকে অবৈধ আখ্যায়িত করেছে। তবে রাশিয়ার দাবি, আন্তর্জাতিক আইনেই সব পদক্ষেপ নিচ্ছে মস্কো। ক্রিমিয়ায় গতকাল স্থানীয় সময় সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলে রাত আটটা পর্যন্ত। ভোট শুরুর ছয় ঘণ্টা পর স্থানীয় সময় বেলা দুইটা পর্যন্ত ‘রেকর্ড পরিমাণ ভোট পড়েছে’ বলে দাবি করেন নির্বাচন কর্মকর্তা মিখাইলো মালিসেভ। তাঁর দাবি, প্রথম ছয় ঘণ্টার মধ্যেই ৪৪ দশমিক ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। গণভোটের ব্যালটে দুটি প্রশ্ন ছিল। একটি হলো, ভোটাররা ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে চান কি না। অন্যটি হলো, ভোটাররা ১৯৯২ সালের সংবিধান ফিরে পেতে চান কি না,
যেখানে আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করেছিল ক্রিমিয়া। বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার পক্ষেই গণভোটের রায় যাবে। অবশ্য ক্রিমিয়ার ২০ লাখ জনগণের মধ্যে ১২ শতাংশ জাতিগত তাতার জনগোষ্ঠী গণভোট বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছে। ক্রিমিয়ায় জাতিগতভাবে রুশ ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ (৫৯ শতাংশ)। তারা রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষেই রায় দেবে—এটা প্রায় নিশ্চিত। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিপক্ষে ভোট দেবে জাতিগত ইউক্রেনিয়ান জনগোষ্ঠী; যারা ক্রিমিয়ার মোট জনগণের মাত্র ২৪ শতাংশ। ক্রিমিয়ার রুশপন্থী প্রধানমন্ত্রী সার্গে আকসিয়োনভ ভোট দিয়ে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিচ্ছে। কোনো কেন্দ্রে সমস্যা নেই।’ সেভাস্তোপোলের একটি ব্যস্ত কেন্দ্রে ৬৬ বছর বয়সী একজন নারী ভোটার বলেন, ‘আমি চাই, আমার বাড়ি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হোক।
আমার স্বজনদের অনেক দিন ধরেই দেখি না আমি।’ ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের সঙ্গেই রাখতে চান—এমন ব্যক্তিদের চাওয়া হলো, ইউক্রেনের সঙ্গে থাকলেও ক্রিমিয়াকে আগের চেয়ে বেশি স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। সেরি রেসেৎনিক বলেন, ‘ক্রিমিয়াকে পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন দেওয়া উচিত, যাতে ক্রিমিয়া নিজের অর্থনৈতিক খাত নিজেই পরিচালনা করতে পারে।’ এদিকে নির্বাচনের পর ক্রিমিয়ার পার্লামেন্টের অধিবেশন বসবে। ভোটের ফল পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন আইনপ্রণেতারা। কিন্তু ভোটের ফল যা-ই হোক, ক্রিমিয়া থেকে নিজেদের সেনা প্রত্যাহার না করার ঘোষণা দিয়েছে ইউক্রেন। ক্রিমিয়ায় ইউক্রেনের ১৫ হাজার সেনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ ইউক্রেনের পক্ষে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। তাই ভোটের পর ক্রিমিয়া পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.