বিদ্যুতের দাম বাড়ানো

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুতের দাম মোট সাড়ে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাব কতটা যুক্তিসংগত, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন দল পিডিবির প্রস্তাব পর্যালোচনা করে বলেছে, বিদ্যুতের দাম ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যুক্তিসংগত হতে পারে। কিন্তু এই মতও সর্বজনগ্রাহ্য না-ও হতে পারে। প্রথমত, গ্রাহকদের শ্রেণীভেদে দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, গরিব আবাসিক গ্রাহকদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ পড়বে সবচেয়ে বেশি, আর সবচেয়ে ধনী আবাসিক গ্রাহকদের ওপর চাপ পড়বে সবচেয়ে কম। পার্থক্যটা ইউনিটপ্রতি এক টাকা ৩৭ পয়সার বিপরীতে মাত্র দুই পয়সা। অর্থনৈতিক দিক থেকে এই বিবেচনার একটা যুক্তি হতে পারে এই যে গরিব আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, তাঁরা এখন বিদ্যুৎ কিনতে পারেন সবচেয়ে কম দামে। আর ধনী আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা সবচেয়ে কম, কিন্তু তাঁরা বিদ্যুৎ কেনেন সবচেয়ে বেশি দামে। অর্থাৎ ধনীরা ইতিমধ্যেই বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আর বেশি দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই অর্থনৈতিক বিবেচনার বিপরীতে সামাজিক দিকটিও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। গরিব গ্রাহকের ওপর আর একটি পয়সারও চাপ বাড়ানো উচিত নয় বলে আমরা মনে করি।
বিদ্যুতের দাম এভাবে বাড়ানোর পক্ষে পিডিবির যুক্তি হলো, বিদ্যুতের অপচয় ও চাহিদা কমানো এবং অতি প্রয়োজনীয় কাজে বিদ্যুতের ব্যবহার নিশ্চিত করা। কিন্তু গরিব গ্রাহক বিদ্যুতের অপচয় করেন না। অপচয় করেন ধনী গ্রাহকেরা; তাঁদের অপচয় ও ক্রমবর্ধমান চাহিদার রাশ টেনে ধরার কার্যকর উপায় এটা হতে পারে না। তা ছাড়া বিদ্যুতের দাম এভাবে বাড়ানো হলে কৃষি খাতের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তাতে কৃষকদের অবস্থা আরও শোচনীয় হবে। কৃষকেরা এমনিতেই উৎপাদন খরচের তুলনায় উৎপাদিত কৃষিপণ্যের দাম সব মৌসুমে ভালো পান না বলে তাঁদের দুর্দশা ঘোচে না; তার ওপর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে তাঁদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। পিডিবির প্রস্তাবটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। প্রশ্ন হলো, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হচ্ছে কেন? তেলচালিত ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হচ্ছে বেশি। মূল সমস্যা যখন এটাই, তখন এই সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে না কেন? কয়লা ও কিছু গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে বিদ্যুতের দামে সামঞ্জস্য আনার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করা হলো না কেন? দেশি কয়লা উত্তোলনে বিরোধিতার মীমাংসা না হলে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করতে হবে। যেভাবেই হোক, আমাদের আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বিদ্যুতের প্রাথমিক জ্বালানির সমস্যার সমাধান করতে হবে। আর এটাই হওয়া উচিত প্রধান বিবেচনা।

No comments

Powered by Blogger.