ক্ষমা চাহিতে পারিলাম না, ক্ষমো হে মম দীনতা by শাহ নেওয়াজ বিপ্লব

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৪২ বছর কেটে গেল, কিন্তু ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ আর লুণ্ঠনে অংশ নেয়া রাজাকার আর আলবদর বাহিনীর নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কাদের মোল্লা- কেউই ক্ষমা চাননি। দেড় বছর ধরে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে তাদের বিচার চলছে ১৯৭১ সালে কৃত অপরাধের জন্য। সে বিচার নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক, শাহবাগ চত্বরে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন, স্কাইপি কেলেংকারি, বিচারকের পদত্যাগ- নানা ঘটনা ঘটে গেল, সেই সঙ্গে বেশ ক’টি বিচারের রায়ও হয়ে গেল, কিন্তু যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত হওয়া একজনও বললেন না, ‘আমি অনুতপ্ত, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’ কেউ বললেন না, ‘১৯৭১ সালে আমরা ভুল করেছিলাম; বাংলাদেশের মাটি, বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাস, ভালোবাসা আর তাদের স্বপ্নের সঙ্গে আমরা বেঈমানী করেছিলাম পাকিস্তানি হানাদারদের সহযোগিতা করে- রাজাকার, আলবদর আর শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে সক্রিয় থেকে।’
একজনও বললেন না, ‘আমরা অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করছি বাংলাদেশের মাটির কাছে, বাংলাদেশের মানুষের কাছে আর সেসব মায়ের কাছে, যারা যুদ্ধের বছর তাদের কিশোরী মেয়েদের বেড়ে না ওঠার জন্য প্রার্থনা করেছিল সৃষ্টিকর্তার কাছে; সেসব বোনের কাছে, আমাদের লোলুপ দৃষ্টির কাছে শহীদ হয়েছে যাদের সম্ভ্রম; আর মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের কাছে- প্রতিদিন চুপি চুপি আসবে বলে বাংলাদেশের মানুষ যাদের জন্য সব ক’টা জানালা এখনও খুলে রাখে।’
না, কেউই ক্ষমা চাইলেন না। বরং উল্টো যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন সাজার রায়ের পর কাদের মোল্লা হাত তুলে দেখালেন বিজয় চিহ্ন। পত্রিকাগুলো কাদের মোল্লার বিজয় চিহ্নের যে ছবি ছেপেছিল, তাতে দেখা যায় সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা কাদের মোল্লা হাতের আঙুল উঁচিয়ে বিজয় চিহ্ন দেখাচ্ছেন আর মুখে তার একরাশ হাসি। মুখজুড়ে অনুতাপের, অনুশোচনার কোনো চিহ্ন নেই। এটি সবচেয়ে বিস্ময়ের যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের বিরোধিতা করার পরও তারা বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পেরেছে এবং এখনও রাজনীতি করছে। আর এসব অপরাধীর জন্য ইতিহাস না জানা কিছু তরুণ গাড়ি ভাঙছে, মিছিল করছে।
অথচ যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়া আজ এক সভ্য আন্তর্জাতিক রীতিতে পরিণত হয়েছে। ভারতে বিজেপির প্রভাবশালী রাজনীতিক নরেন্দ্র মোদি আগামীতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে কিছুদিন আগে ২০০২-এর গুজরাট দাঙ্গার জন্য তার দল বিজেপি ও শিবসেনার কিছু নেতাকে দায়ী করে অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। ভারতের কথা যখন এলো তখন আরেকটু বলি, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘নট দ্য ব্রিটিশ ওয়ে অব ডুইং বিজনেস।’ তারপর ১৯৯৭ সালে স্বামী প্রিন্স ফিলিপকে নিয়ে অমৃতসরে এসেছিলেন কুইন এলিজাবেথ। দুজনে মিলে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের স্মরণে নির্মিত শহীদস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানিয়ে ঘটন

No comments

Powered by Blogger.