আড়াই হাজার কোটি টাকা বাজেট সহায়তা দিচ্ছে এডিবি by হামিদ-উজ-হাসান মামুন

পদ্মা সেতু নিয়ে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেও সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে দাতারা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশকে ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা (৩০ কোটি ডলার) বাজেট সহায়তা হিসেবে দিতে সম্মত হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে সংস্থাটির বোর্ড সভায় এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে।


অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং এডিবির বাংলাদেশ অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে ইআরডির এডিবি উইংয়ের প্রধান সাইফুদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, তুলনামূলকভাবে সহজ শর্তে বাজেট সহায়তা পাওয়ার জন্য সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আরও আলোচনা আগামী মাসে হবে। কোন ধরনের সমস্যা না হলে এ বছরের মধ্যে ঋণের প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়া যাবে। তিনি জানান, বাজেট সহায়তার টাকা তারা সরকারের ফান্ডে জমা দেয়। সরকার ইচ্ছে মতো যেকোন প্রয়োজনে ব্যয় করতে পারে। এটিই হচ্ছে এ ঋণের সবচেয়ে বড় গুণ।
জানা গেছে, চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরে সরকারের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বাজেট সহায়তা দেবে এডিবি। এ বাজেট সহায়তার বিষয়ে এডিবি এবং ইআরডির মধ্যে আলোচনা চলছে। আগামী আগষ্ট মাসে চূড়ান্ত নেগোসিয়েশনের কাজ শেষ হবে এবং সেপ্টেম্বরে বোর্ড সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সংস্থাটির অনুমোদনের দুই মাস পর ডিসেম্বরে প্রথম কিস্তির ১৫ কোটি ডলার পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এডিবির বাজেট সহায়তার মধ্যে সহজ শর্তে বা এশীয়ান ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের আওতায় (এডিএফ) ২০ কোটি ৫ লাখ ডলার। আগামী ২৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে গ্রেস পিরিয়ড আট বছর। এ সময় সুদ ১ শতাংশ। আর গ্রেস পিরিয়ড পরবর্তী সুদ দিতে হবে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে তুলনামূলক কঠিন শর্তে ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার দেবে সংস্থাটি। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। গ্রেস পিরিয়ডে সুদ ১ শতাংশ। এর পরবর্তী সময়ে লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফার রেট (লাইবর) এর সঙ্গে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে এডিবির বাংলাদেশ অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলা হয় সদর দফতর থেকে বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে তাই আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউই। তবে সংশ্লিষ্ট এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বাজেট সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব ছিল। সেটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন আছে।
ইআরডি সূত্র জানায়, এর আগে ২০১০ সালে এডিবির পক্ষ থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৭৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার দেয়া হয়। এর মধ্যে সরকারী ব্যয় সহায়তা সুবিধার আওতায় ২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলা সংক্রান্ত সহায়তার আওতায় ৫০ কোটি ডলার।
অন্যদিকে বাজেট সহায়তার বাইরে বাংলাদেশকে ছয় খাতে ৩৬১ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেবে পরিবহন খাতে। চলতি বছর থেকে আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে চার বছরে এ ঋণ প্রদান করবে। সংস্থার বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রোগ্রামিং মিশন-২০১২ তে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
চলতি ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সংস্থাটি যেসব খাতে ঋণ প্রদান করবে সেগুলো হচ্ছে কৃষি ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে মোট ২৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে এডিবির নিজস্ব তহবিল থেকে ২০ কোটি ৫০ লাখ এবং অন্যান্য সূত্র থেকে ৩ কোটি মার্কিন ডলার দেবে।
শিক্ষা খাতে মোট ৩৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করবে। এর মধ্যে ৩১ কোটি ৫০ লাখ এডিবির নিজস্ব আর বাকি ৫ কোটি মার্কিন ডলার অন্যান্য সূত্র থেকে সংগ্রহ করে ঋণ দেবে।
জ্বালানি খাতে মোট ৯১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করবে। এর মধ্যে সংস্থার নিজস্ব তহবিলের ৮ কোটি ৪০ লাখ এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৮৩ কোটি ২ লাখ মার্কিন ডলার প্রদান করবে।
আর্থিক খাতে মোট ঋণ দেবে ২৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে তাদের নিজস্ব তহবিলের ২০ কোটি ২০ লাখ এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৪ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করে প্রদান করবে।
পরিবহন খাতে মোট ৯৯ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করবে। এর মধ্যে এডিবির নিজস্ব তহবিলের ৩২ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৬ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার দেবে।
এছাড়া শহর উন্নয়ন খাতে মোট ঋণ প্রদান করবে ৮৬ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে সংস্থার নিজস্ব তহবিলের ৭১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার এবং অন্যান্য উৎস থেকে ১৫ কোট মার্কিন ডলার সংগ্রহ করে ঋণ প্রদান করবে।

No comments

Powered by Blogger.