অননুমোদিত বই পড়ালে ছয় মাসের কারাদণ্ড by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার সব ধারায় (সাধারণ, মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেন) শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, ধর্ম শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা, বাংলাদেশ স্টাডিজ, গণিত, পরিবেশ পরিচিতি, তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা হবে আট বছর মেয়াদি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করবে। পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া শিক্ষাক্রমের অতিরিক্ত বিষয় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে সংযোজন করা যাবে না। একই সঙ্গে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের সাধারণ, কিন্ডারগার্টেন, ইংরেজি মাধ্যম, মাদ্রাসাসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে।

নিবন্ধন ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না। শুধু প্রাথমিক নয়, মাধমিক স্তরেও এভাবে নিবন্ধন নিতে হবে। নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষা আইনের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনের এসব ধারা লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
দেশে এই প্রথম শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। শিক্ষা আইনের এই খসড়াটি তৈরি করেছে এ-সংক্রান্ত উপকমিটি।
২১টি অধ্যায়ের ২৮ পৃষ্ঠার এই শিক্ষা আইনের খসড়ায় প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা, মাদ্রাসা ও নৈতিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, প্রকৌশল, চিকিৎসা ও বিজ্ঞান শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা, কৃষি শিক্ষা, আইন শিক্ষা, ক্রীড়া শিক্ষা, স্কাউট গার্লস গাইড ও শারীরিক শিক্ষা, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের মর্যাদা ও দায়িত্ব, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষা প্রশাসন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, জাতীয়করণ ও গ্রন্থাগার স্থাপন, নারী শিক্ষা ও শিক্ষা আইনের কার্যকারিতা, রহিতকরণ ও হেফাজতের বিভিন্ন ধারার বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর নেতৃত্বে শিক্ষা আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ইতিমধ্যে শিক্ষা আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। শিগগিরই তা চূড়ান্ত করা হবে। এটি শিক্ষা আইন-২০১১ নামে অভিহিত হবে।'
শিক্ষা আইন প্রণয়ন কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে সবার জন্য শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষা আইন করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা আইন ১৯৯০ সংশোধন করা হবে। আট বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষাস্তর হলে এ সংশোধনী প্রয়োজন। সংশোধিত আইনে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে লাগামহীন ফি নেওয়ার প্রবণতা রোধের ব্যবস্থা থাকবে এ শিক্ষা আইনে।
শিক্ষা আইন প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, শিক্ষা আইনে বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীরা কী রকম পোশাক পরবে, এর বিস্তারিত এ আইনে থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের ভূমিকা কী হবে, তাও বলা থাকবে। এ ছাড়া শিক্ষকরা কিভাবে শাস্তি না দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াবেন, সেটাও থাকছে এ আইনে।'
প্রাথমিক শিক্ষা : প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে বলা হয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে 'পরিচালনা পর্ষদ' করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পর্ষদ গঠনের কার্যাবলি নির্ধারণ করবে। প্রাথমিক স্তরের সর্বশেষ তিন শ্রেণী (ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম) শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রাক-বৃত্তিমূলক ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষক নির্বাচনের জন্য শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৭ থেকে ৯ সদস্যের একটি 'বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন/কর্তৃপক্ষ' করতে হবে। এ জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এ ছাড়া প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগে সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে সব স্তরে দ্বিতীয় বিভাগসহ এইচএসসি অথবা সমমান। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগে সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে সব স্তরে দ্বিতীয় বিভাগসহ স্নাতক অথবা সমমান। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে আদিবাসী ও সব ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জন্য নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী, সুবিধাবঞ্চিত ও অটিস্টিক শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
মাধ্যমিক শিক্ষা : মাধ্যমিক স্তরের সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় জনসমতা সৃষ্টির জন্য শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, বাংলাদেশ স্টাডিজ, সাধারণ গণিত ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি বাধ্যতামূলক করা হবে। এসব বিষয়ে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষা হবে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত।
প্রাথমিক স্তরের মতো মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শিক্ষক নিয়োগের জন্য বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন/কর্তৃপক্ষ করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষক নির্বাচনের জন্য শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৭ থেকে ৯ সদস্যের একটি 'বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন/কর্তৃপক্ষ' গঠন করতে হবে। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
এ আইনের মাধ্যমে ইংরেজিসহ অন্য কোনো মাধ্যমে বিদ্যালয় স্থাপন করতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। এ আইনের অধীনে মাধ্যমিক স্তরে সব ধরনের সাধারণ, ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসাসহ সব বিদ্যালয়কে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে বাধ্যতামূলক নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন কিংবা পরিচালনা করা যাবে না। নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের বিভিন্ন শর্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জারি করবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনের এ ধারা লঙ্ঘন করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর জন্য দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।
'ও' এবং 'এ' লেভেলের পাঠদান সরকারের অনুমতি নিয়ে করতে হবে। উভয় ক্ষেত্রে সাধারণ ধারার সমপর্যায়ে বাংলা ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বাধ্যতামূলক পড়াতে হবে। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে শিক্ষার্থী বেতন ও অন্য ফি সরকার নির্ধারণ করে দেবে। অনুমোদন ছাড়া ফি নিলে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য সরকার পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়ে ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষককে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা নেবে সরকার। পর্যায়ক্রমে এক বা একাধিক বিদ্যালয়ের জন্য মনোবিজ্ঞানী নিয়োগের ব্যবস্থা করবে।
মাদ্রাসা শিক্ষা : মাদ্রাসা শিক্ষার এবতেদায়ি দাখিল ও আলিম স্তরে স্বীকৃতি প্রদান, নবায়ন, ধর্মীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ, সনদ প্রদান ও মাদ্রাসা শিক্ষা উন্নয়নের জন্য সরকার 'মাদ্রাসা এডুকেশন অর্ডিন্যান্স-১৯৭৮'-এর প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে। শিক্ষার অন্যান্য ধারার সঙ্গে সমতা আনার জন্য মাদ্রাসা শিক্ষার মেয়াদকাল এবতেদায়ি আট বছর, দাখিল দুই বছর ও আলিম দুই বছর নির্ধারণ করবে। এবতেদায়ি পর্যায়ে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, নৈতিক শিক্ষা, বাংলাদেশ স্টাডিজ, প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিচিতি, তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করা হবে। দাখিল পর্যায়ে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ এবং প্রাক-বৃত্তিমূলক ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হবে। আলিম পর্যায়েও শিক্ষাক্রমের প্রয়োজনীয় পরিমার্জনের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া সাধারণ ধারায় উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সমন্বয় করে চার বছরমেয়াদি ফাজিল স্নাতক কোর্স এবং এক বছরমেয়াদি কামিল কোর্স চালু করা হবে। তবে প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক ও ভৌত অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতের আগ পর্যন্ত ফাজিল ও কামিল কোর্সের বর্তমান মেয়াদ অব্যাহত থাকবে। মাদ্রাসা শিক্ষার শিক্ষকদের বেতন-ভাতা কাঠামো সাধারণ শিক্ষার শিক্ষকদের সমপর্যায়ে উন্নীত করা হবে। মাদ্রাসায় কর্মরত শিক্ষকদের বিএড ডিগ্রি অর্জনের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিএড ডিগ্রি অর্জন বাধ্যতামূলক করা হবে। ফাজিল, কামিল পর্যায়ে শিক্ষাক্রম অনুমোদন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকি ও পরিবীক্ষণ এবং পরীক্ষা পরিচালনার জন্য দেশে একটি 'অনুমোদনকারী ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়' স্থাপন করা হবে। কওমি মাদ্রাসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে একটি 'কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন' করা হবে। এ কমিশন কওমি প্রক্রিয়ায় ইসলাম শিক্ষার ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষাদান বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে।
উচ্চশিক্ষা : উচ্চশিক্ষার জন্য ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষার বই বাংলায় অনুবাদের ব্যবস্থা করতে হবে। চার বছরের স্নাতক ডিগ্রিকে উচ্চশিক্ষা স্তরে শিক্ষকতা ব্যতীত অন্য সব কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য নূ্যনতম প্রয়োজনীয় যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেগুলোতে অনার্সসহ স্নাতক পর্যায়ের কোর্সে নূ্যনতম ১০০ নম্বরের ইংরেজি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হবে। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের প্রথম চাকরির প্রাপ্তির শিক্ষাতত্ত্ব, শিক্ষাদান পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে ধারণা লাভ ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উচ্চশিক্ষায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, শান্তি ও সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা থাকবে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যয় নির্বাহের জন্য শিক্ষার্থীদের বেতন যৌক্তিক হারে নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত ও অনুমোদিত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করা যাবে না। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি সংস্কৃতির পরিপন্থী কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বাংলাদেশে কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, ডিপ্লোমা কিংবা সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনা ও ডিগ্রি দেওয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা বাংলাদেশে কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়/প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস, স্টাডি সেন্টার বা টিউটরিয়াল কেন্দ্র পরিচালনা করা যাবে না। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এর ব্যত্যয় ঘটালে এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
আইনের আরো উল্লেখযোগ্য অংশ
শিক্ষা আইনের খসড়ায় পরীক্ষা ও মূল্যায়ন অংশে বলা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং তৃতীয় শ্রেণীতে ত্রৈমাসিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা চালু থাকবে। অন্যান্য শ্রেণীর মধ্যে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণী শেষে সমাপনী পরীক্ষা, দশম শ্রেণী শেষে এসএসসি ও দ্বাদশ শ্রেণী শেষে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা চালু থাকবে। তবে শিক্ষার্থীদের মুখস্ত করার প্রবণতাকে নিরুৎসাহিত করার জন্য সব পরীক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হবে।
এ ছাড়া যেসব পরীক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না তারা বিদ্যালয় থেকে 'কোর্স সমাপ্তি' নামে একটি সনদপত্র পাবে। শিক্ষার্থীর আন্তপরীক্ষা ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের ফলাফল ও জন্ম তারিখ এ সনদে উল্লেখ থাকবে। মাধ্যমিক পর্যায়ের পাবলিক পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ দুই বিষয়ে অকৃতকার্য হলে তাকে ওই দুটি বিষয়ে দুইবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে। গাইড বই, নোট বই, প্রাইভেট টিউশন ও কোচিং বন্ধে সরকার যথাযথ উদ্যোগ নেবে। গাইড বই, নোট বই তৈরি ও সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বর্তমান আইন সংশোধন করা হবে। নতুন শিক্ষা আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, শিক্ষার সব ধারার সব স্তরের শিক্ষককে প্রশিক্ষণ ও যুগোপযোগী এবং মানসম্পন্ন করার জন্য 'শিক্ষক প্রশিক্ষণ নীতিমালা' প্রণয়ন করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য বর্তমানে প্রচলিত এক বছর মেয়াদী সার্টিফিকেট-ইন-অ্যাডুকেশন প্রশিক্ষণ কোর্স ১৮ মাস মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন অ্যাডুকেশন কোর্স করা হবে। এ ছাড়া শিক্ষকদের পেশাগত আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.