ভূমিকম্পে ভারত, নেপাল ও তিব্বতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ভারত, নেপাল ও তিব্বতে গত রোববার আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৬ জনে পৌঁছেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার এই ভূমিকম্পের আঘাতে কয়েক শ লোক আহত হয়েছে। ভূমিধস ও প্রবল বৃষ্টির কারণে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।
ভূমিকম্পের আঘাত ও এরপর ভূমিধসের ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ৪৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হিমালয় রাজ্য সিকিমে ২৮ জন, পশ্চিমবঙ্গে ১১ জন, বিহারে সাতজন, ঝাড়খন্ডে দুজন ও ওডিশায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকে ভূমিধস ও ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে অন্তত ৬০ জন আহত হয়। নেপালে নয়জন ও তিব্বতে সাতজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
নেপালের পুলিশ গতকাল বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের ২৭০ কিলোমিটার পশ্চিমে রাজধানী কাঠমান্ডুতে ব্রিটিশ দূতাবাসের দেয়াল ধসে তিনজনের প্রাণহানি ঘটে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মোটরসাইকেলের একজন আরোহী ও তাঁর আট বছর বয়সী মেয়ে রয়েছে।
নেপালের পুলিশ মুখপাত্র বিনোদ সিং বলেন, দেশটির পূর্বাঞ্চলে পৃথক ঘটনায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নয়জনের মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ভূমিকম্পের এই ঘটনায় নেপালের পার্লামেন্টে বাজেট আলোচনা ১৫ মিনিট স্থগিত ছিল। এ সময় পার্লামেন্ট ভবন দুলতে থাকায় আইনপ্রণেতারা দ্রুত ওই ভবন থেকে বেরিয়ে যান। ভূমিকম্পে সে দেশে অন্তত ৫০০ ঘরবাড়ি ধসে পড়ে।
চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, সিকিম সীমান্তবর্তী তিব্বতের দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্পে সাতজনের প্রাণহানি ঘটে।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সরকারি কর্মকর্তারা এএফপিকে জানায়, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিকিম রাজ্য। ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে এ রাজ্যের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উত্তর সিকিমের রংপো, দিকচু, সিংটাম ও চুংথাং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিকিমের গেগং এলাকায় ইন্দো টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশের (আইটিবিপি) একটি ভবন ধসে পড়েছে। উত্তর সিকিমে সেনাবাহিনীর দুই সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। সেনাবাহিনীর তিনটি যান ও একটি বাস নিখোঁজ রয়েছে। এই যান ও বাসে সিকিমের সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছিলেন। সিকিমে ১২টি সেনা বিমান উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দার্জিলিং, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলায়। দার্জিলিংয়ের প্রবেশদ্বার শিলিগুড়ির সঙ্গে দার্জিলিংয়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিকিম, দার্জিলিং ও কোচবিহারের সঙ্গে টেলিযোগাযোগ ও বিদ্যুতের সংযোগ গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন ছিল। সিকিমে গত রোববার রাতে আরও অন্তত ২০ বার মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়।
সিকিমের রাজ্যপাল বি পি সিং গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সিকিমে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এনডিআরএফ বা ন্যাশনাল ডিজেস্টার রেসপন্স ফোর্সের সদস্যরা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্যপাল আরও বলেন, সিকিমে অন্তত শতাধিক ঘরবাড়ি ও কার্যালয় ধসে পড়েছে। গ্যাংটকের সদর পুলিশ স্টেশন বিধ্বস্ত হয়েছে। রাজ্যের ৮৫ শতাংশ বাড়িতে ফাটল ধরেছে। আইটিবিপির সদস্যরা ২২ পর্যটকসহ ৩৭২ জনকে উদ্ধার করেছে।
দার্জিলিংয়ের কালিম্পং, কার্শিয়াং ও শিলিগুড়ি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল কার্শিয়াং ও শিলিগুড়ির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ভূমিকম্পে কেন্দ্রীয় সরকার মৃত ব্যক্তিদের পরিবারপিছু দুই লাখ রুপি ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার আরও দুই লাখ রুপি করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
ভূমিকম্পে কলকাতায় বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও কলকাতার পুলিশ সদর দপ্তর লালবাজারে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা এএফপিকে জানায়, গত রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টা ১০ মিনিটের দিকে সিকিম ও নেপাল সীমান্তে ভূমিকম্প আঘাত হানার পর ভুটানের হিমালয় অঞ্চলে এটি অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল গ্যাংটকের মাত্র ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ভূ-পৃষ্ঠের মাত্র ১৯ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৬ দশমিক ৯।

No comments

Powered by Blogger.