ওয়াটসন-ঝড়ে বিস্ময়

সকালের আলোচনায় মাশরাফি বিন মুর্তজা, দিন শেষে শেন ওয়াটসন। আগের রাতেও যেখানে মাশরাফির খেলাটা একরকম নিশ্চিত ছিল, সকাল বেলায় সে সিদ্ধান্ত কেন বদলে গেল? দিন গড়াতে গড়াতে এই প্রশ্ন বিলীন। ওয়াটসনের বিধ্বংসী ইনিংসের নিচে হারিয়ে গেল মাশরাফির না খেলার প্রশ্ন।
যত দূর জানা গেছে, কাল সকালে খেলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন মাশরাফি। ওয়ার্মআপের আগে কোচ জেমি সিডন্সই জানান, এই ম্যাচের দলে তিনি নেই। রুবেল হোসেন খেলবেন। কোচের সিদ্ধান্ত নির্বিবাদে মেনে নিয়ে মাশরাফি হয়ে থাকলেন চতুর্দশ ব্যক্তি। মাঝেমধ্যে মাঠে পানি টানতেও দেখা গেল তাঁকে।
সকাল বেলায় কেন বদলে গেল মাশরাফিকে খেলানোর সিদ্ধান্ত, সেটা অবশ্য কাল জানার উপায় থাকেনি ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনেও। জানাবেন কে? কোচ-অধিনায়কের কেউই আসেননি সংবাদ সম্মেলনে! এলেন শাহরিয়ার নাফীস। তাঁকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে জানা উত্তরটাই দিলেন, ‘দল নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি তো টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ নই।’ সাকিব বা কোচ কেন এলেন না সংবাদ সম্মেলনে, সেই প্রশ্নেও একই উত্তর। আগের ম্যাচে ২ উইকেট পেয়েও মাশরাফির না খেলাটা রহস্য হয়ে রইল।
শাহরিয়ারকে সংবাদ সম্মেলনে যেসব বিষয়ে কথা বলতে হলো, তা অবশ্য অধিনায়কেরই কথা বলার কথা। পাঁচ ম্যাচ পর ফিফটি করেছেন, সেটা নিয়ে যত না কথা হলো তার চেয়ে বেশি হলো ওয়াটসনের ইনিংস আর বাংলাদেশের বোলিং-ব্যাটিং নিয়ে।
শেন ওয়াটসনের অপরাজিত ১৮৫ রানের ইনিংস আর ১৫ ছক্কা শাহরিয়ারের কাছেও মনে হচ্ছে ক্রিকেটের বিরল ঘটনা, ‘আমরা ভালো রানই করেছিলাম। এ উইকেটে এই স্কোর ডিফেন্ড করতে আমরা অভ্যস্ত। ওয়াটসন আসলে বিরল এক ইনিংসই খেলেছে। এ রকম ইনিংস এক জীবনে একবারই খেলা যায়। কেউ এভাবে ব্যাট করলে ৩০০-৩৫০ রানও ম্যাচ জেতার জন্য যথেষ্ট নয়।’
এ রকম ইনিংস ওয়াটসন চাইলেও আরেকটা খেলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে শাহরিয়ারের। এমন ইনিংসে ভাগ্যেরও সাহায্য দেখেন এই বাঁহাতি, ‘লক্ষ্য করলে দেখবেন, ওর ১৫টা ছয়ের মধ্যে ৭টাই মিস হিট। আজকের দিনটা পুরোপুরিই ওর ছিল। যদি আপনি ওকে কাল আবার এ রকম একটা ইনিংস খেলতে বলেন, পারবে না। তবুও ওয়াটসনকে কৃতিত্ব দিতে চাই। তাঁর অসাধারণ ইনিংসের কাছেই হেরে গেলাম।’
ওয়াটসনের ব্যাট বেশি চাবুক হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের স্পিনারদের ওপরই। শাহরিয়ার অবশ্য বলছেন, ‘ওয়াটসনের মতো কেউ যদি এ রকম একটা ইনিংস খেলে ফেলে, তাহলে শুধু আমাদের বোলিং অ্যাটাক নয়, বিশ্বের কোনো বোলিং অ্যাটাকেরই আসলে কিছু করার থাকবে না।’ তবে অস্ট্রেলিয়ার দেড় শ রান পর্যন্তও আশায় ছিলেন শাহরিয়াররা। যদি একটা উইকেট পড়ে...যদি এর ধারাবাহিকতায় আরও দুটি উইকেট নেওয়া যায়! কিন্তু হলো না। ‘১৫০-১৬০-এর পর ওয়াটসন যেভাবে মারা শুরু করল, তখন কিছুই করার ছিল না’—বলেছেন শাহরিয়ার।
মুশফিকুর রহিম পরে যেভাবে জ্বলে উঠেছিলেন তাতে শাহরিয়ারের ইনিংসটা আরেকটু লম্বা হলে অস্ট্রেলিয়ার টার্গেটটাও হতে পারত আরেকটু বড়। সেটা করতে না পারায় হতাশা আছে শাহরিয়ারের, ‘আউট হওয়ার পর খুবই খারাপ লাগছিল। এত পরিশ্রম করার পর ওদের সবচেয়ে সহজ দুজন বোলার যখন বোলিং করছিল, তখনই আউট হলাম!’ তার পরও এই ম্যাচের প্রাপ্তিটা ব্যাটিং থেকেই এসেছে বলে মনে হচ্ছে শাহরিয়ারের। শুরুটা ভালো না হলেও চরম বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রুখে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। তিনটা ভালো জুটি হয়েছে। এসবকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন শাহরিয়ার।
কিন্তু আগামীকাল শেষ ম্যাচে কি ব্যাটসম্যানদের ঘুরে দাঁড়ানোর সাফল্যকে ছাপিয়ে ওয়াটসন-আতঙ্কটাই বড় হয়ে উঠবে না বাংলাদেশ দলের কাছে? ৫৮-৭৮-এর পর এখন তো এই ভূতই চেপে বসার কথা! শাহরিয়ার অবশ্য সতীর্থদের সতর্ক করলেন, ‘ওয়াটসন যেভাবে ব্যাটিং করল, পরের ম্যাচে সেটা আমাদের মাথায় না রাখলেই ভালো।’
হ্যাঁ, বাংলাদেশ দলের মাথায় এখন সব ঝেড়ে ফেলারই স্মৃতি। মনে রাখার মতো স্মৃতিতে পড়ছে ধুলোর আস্তরণ।

No comments

Powered by Blogger.