ক্যাপেলো-হিজফেল্ডের মিল

দুজনেরই বুকভরা সাফল্যের গর্ব। একজনের আছে সাতটি বুন্দেসলিগা ও দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের কৃতিত্ব। আরেকজনের নথিতে চারটি সিরি ‘আ’, দুটি লা লিগা ও একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা।
সব সাফল্যই ক্লাবের হয়ে। জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর সাবেক বায়ার্ন মিউনিখ কোচ ওটমার হিজফেল্ড বা সাবেক জুভেন্টাস-মিলান-রিয়াল কোচ ফ্যাবিও ক্যাপেলোর প্রাপ্তি শুধুই হতাশা। কিন্তু আজ বাসেলে হিজফেল্ড ও ক্যাপেলো যখন প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ফুটবলে পরস্পরের মুখোমুখি হবেন, তখন তাঁদের মুখে হতাশা ছাপিয়েও বেশি বিরক্তি।
ইউরো বাছাইপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে হিজফেল্ডের সুইজারল্যান্ড ও ক্যাপেলোর ইংল্যান্ড। আজ আরও একগুচ্ছ ম্যাচ হবে ইউরোর বাছাইপর্বে। এর মধ্যে কোলনে জার্মানি-আজারবাইজান, ফ্লোরেন্সে ইতালি-ফারো দ্বীপপুঞ্জ, সারায়েভোতে বসনিয়া-ফ্রান্স ও অসলোতে পর্তুগাল-নরওয়ে ম্যাচ দৃষ্টি কাড়ার কথা।
ফুটবলীয় শক্তি বিবেচনায় ইংল্যান্ড-সুইজারল্যান্ড ম্যাচের এমন কিছু দৃষ্টি আকর্ষণ করার কথা নয়। ইউরো বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে ওয়েম্বলিতে বুলগেরিয়াকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বলেই ইংল্যান্ডের কাছে সুইজারল্যান্ডকে সহজ প্রতিপক্ষ মনে হওয়াই স্বাভাবিক। ম্যাচের আগে তাই দুদলকে সমান্তরালে রাখা কঠিন।
সমান্তরালে চলে এসেছেন দুই কোচ; সেই বিরক্তির কারণে। ক্যাপেলোর বিরক্তির কারণটা অনুমেয়। বিশ্বকাপের আগে ইংল্যান্ডে রাতারাতি ‘ত্রাতা’, ‘নায়ক’ নানা রকম খেতাব পেয়ে গিয়েছিলেন এই ইতালিয়ান। কিন্তু বিশ্বকাপে শোচনীয় পারফরম্যান্স সেই ক্যাপেলোকেই ‘বিরক্তিকর’ চরিত্রে পরিণত করেছে।
বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ভালো খেলার পরও ইংলিশ সংবাদমাধ্যম তাঁর সম্পর্কে যাচ্ছেতাই লিখছে। এতেই খুব বিরক্ত ক্যাপেলো। বিরক্তি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, ইংলিশদের সম্মানবোধ সম্পর্কেই সন্দেহ জেগেছে তাঁর মনে।
জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি আরেকটু সম্মান আশা করেন কি না? হতাশ ক্যাপেলো উত্তর দিয়েছেন, ‘সম্মান শব্দটা ঠিক না। কারণ ইতালিতে সম্মান করা বলতে অনেক বড় কিছু বোঝা যায়। ইংরেজিতে সম্মান শব্দটাকে বড় হালকাভাবে ব্যবহার করা হয়।’ নাকি সঠিক ব্যবহারই হয় না?
সে যা-ই হোক, একই রকম চটে আছেন হিজফেল্ডও। সুইজারল্যান্ডের দায়িত্বে থাকা হিজফেল্ডকেও বিরক্তির কারণ সুইস সমর্থকদের আচরণ। বিশ্বকাপে স্পেনকে ১-০ গোলে হারানোর কৃতিত্ব আছে সুইজারল্যান্ডের, কিন্তু এরপর থেকে গোল করায় ব্যর্থতা মোটেও পছন্দ হচ্ছে না সমর্থকদের। বিশেষ করে গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্রতে শেষ হওয়া প্রীতি ম্যাচে আলেক্সান্ডার ফ্রেই পেনাল্টি মিস করার পর দর্শকরা খুবই দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ করেছে সেই অপছন্দের।
দর্শকের একাংশ মাঠে খুব দুয়ো দিয়েছে ফ্রেইকে। এতে চটেছেন হেজফিল্ড, ‘কিছু সমর্থক তার সঙ্গে যে আচরণ করেছে, সেটা বিব্রতকর। এই দলটায় আলেক্সান্ডার ফ্রেইয়ের অসামান্য অবদান আছে।’
হেজফিল্ড-ক্যাপেলো যখন সমর্থক-সংবাদমাধ্যমের আচরণে বিব্রত, বিরক্ত—আরেক ইউরোপীয় কোচ লরাঁ ব্লাঁ তখন আরেকবার পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছেন। আসলে যা অগ্নিপরীক্ষারই নামান্তর।
বিশ্বকাপের ভরাডুবি ও কেলেঙ্কারি থেকে দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব বর্তেছে বিশ্বকাপজয়ী ব্লাঁর কাঁধে। কিন্তু নরওয়ের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচের পর ইউরো বাছাইপর্বে বেলারুশের কাছেও হেরে গেছে ‘ডুবন্ত’ ফ্রান্স। যদিও এখনো ব্লাঁর ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়নি ফরাসিরা। কিন্তু ব্লাঁ নিজেই ভরসা দিতে পারছেন না।
এমনকি কত দিনে পরিস্থিতি ভালো হবে, তা নিয়েও আশার কথা শোনাতে পারছেন না ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী দলের ডিফেন্ডার, ‘বর্তমান অবস্থায় আমরা এটা বলতে পারি না যে, বসনিয়ায় জিততে যাচ্ছি। আমি জানি না, (পরিস্থিতি ভালো হতে) কত দিন সময় লাগবে বা আদৌ ভালো হবে কি না। শুধু আশা করতে পারি, যত দ্রুত সম্ভব যেন সবকিছু ঠিক হয়ে যায়।’
এত খারাপ না হলেও পর্তুগালকেও আজ একটু দুশ্চিন্তা নিয়ে মাঠে নামতে হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা থাকায় ডাগ-আউটে থাকতে পারবেন না কোচ কার্লোস কুইরোজ। কিন্তু তিনি যেখানেই থাকুন, রক্ষণভাগ নিয়ে চিন্তা তাঁর সঙ্গী হচ্ছেই।
যে পর্তুগাল বিশ্বকাপের চার ম্যাচে একটি মাত্র গোল হজম করেছে, তারাই গত ম্যাচে সাইপ্রাসের কাছে (৪-৪) চার গোল খেয়েছে। দুর্বলতাটা রক্ষণভাগের। দ্বিতীয় ম্যাচেই এটি কাটিয়ে ওঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডিফেন্ডার রিকার্ডো কারভালহো। দেখা যাক, আজ নরওয়ের বিপক্ষে এই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেন কি না কারভালহোরা।

No comments

Powered by Blogger.