ম্যাচ অনুশীলনটাই বড়

শারজা দেখা হয়ে গেছে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সফরেই। মরুর বুকে ক্রিকেটটা তাই নতুন ছিল না সাকিব আল হাসানের জন্য। তারপরও পিসিএল খেলতে এবারের যাওয়াটা ছিল একটু অন্য রকম। একে তো গেলেন বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো হওয়া বাংলাদেশের কোনো ঘরোয়া আসর খেলতে, তার ওপর টুর্নামেন্টটা মর্যাদা পেয়ে গেল আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির উপলক্ষ হিসেবেও। বিশ্বকাপের আগে এমন একটা টুর্নামেন্ট খেলার অভিজ্ঞতা দলের কাজে লাগবে বলেই বিশ্বাস বাংলাদেশ অধিনায়কের।
টপ স্পোর্টস সেমিফাইনালের আগেই ছিটকে পড়ায় পরশু রাতে ঢাকা ফিরে এসেছেন সাকিব। দল সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি, টুর্নামেন্টে নিজের পারফরম্যান্সও উজ্জ্বল নয়, পিসিএল-অভিযান তার পরও সফল মনে হচ্ছে বাংলাদেশ অধিনায়কের কাছে, ‘সব মিলিয়ে ভালোই হয়েছে। আমি আর আশরাফুল ভাই রান করতে না পারলেও তামিম, রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ), আফতাব ভাই ভালো খেলেছেন। তবে রান করাটা তো বড় কথা না, সবচেয়ে বড় কথা বিশ্বকাপের আগে আমরা এতগুলো ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলাম।’
পিসিএলই শুধু নয়, বিশ্বকাপের আগে ১১ থেকে ২০ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে এনসিএল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। বিশ্বকাপের মূল প্রস্তুতিটা এই টুর্নামেন্টের সময়ই হবে সাকিবের দলের। এক দিকে ম্যাচ, অন্য দিকে যেদিন যাদের ম্যাচ থাকবে না তারা করবে অনুশীলন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের আগে ম্যাচ প্র্যাকটিসের এই অবারিত সুযোগ আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে সাকিবকে, ‘এমনিতে আমাদের খুব বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় না। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তাই ভালো পারফরম্যান্স নেই। এবার পিসিএল খেললাম, এরপর এনসিএল হবে—বিশ্বকাপের জন্য তৈরি হওয়ার ভালো সুযোগ বলতে পারেন এই দুইটা টুর্নামেন্টকে।’
সাকিব শারজা থাকতেই ঢাকায় ঘোষিত হয়েছে বিশ্বকাপের ১৫ সদস্যের দল, দেশে ফিরে যেটাকে অধিনায়ক বলছেন ‘সময়ের সম্ভাব্য সেরা’। তবে এই দলের দুই পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা আর রুবেল হোসেন টি-টোয়েন্টি ম্যাচ প্র্যাকটিসের সুযোগটা সেভাবে পেলেন না বিশ্বকাপের আগে। আইপিএলে গিয়ে মাশরাফি কেবল অনুশীলনই করে যাচ্ছেন, খেলা হচ্ছে না। আর ভিসা হয়নি বলে রুবেল যেতে পারেননি পিসিএলে। তবে পিসিএলে বল হাতে অন্যদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট সাকিব, ‘সুহাস (শফিউল ইসলাম) ও রাসেল ভালো বল করেছে। স্পিনে নাঈম আর আমিও খারাপ করিনি। সব মিলিয়ে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স একেবারে খারাপ হয়নি ওখানে।’
টপ স্পোর্টসের কোচ আর জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন একমত সাকিবের সঙ্গে। তবে ভালো ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাওয়াটাই তাঁর কাছে পিসিএলের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক, ‘অন্য দেশের ভালো ভালো ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছে আমাদের খেলোয়াড়েরা। কখনো একই দলে, কখনো প্রতিপক্ষ দলে—এটা একটা প্লাস পয়েন্ট। পাকিস্তানের সাবেক ও বর্তমান জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারই খেলেছে এখানে। তাদের উপস্থিতিতে খেলার মানটাও বেশ ভালো ছিল।’ তবে জাতীয় দলের কোচিং স্টাফের সদস্য হিসেবে কিছু অতৃপ্তি তাঁরও আছে, ‘তামিম, রিয়াদ, অমি (জহুরুল) ভালো করেছে। কিন্তু আশরাফুল-নাঈমের আরও ভালো করা উচিত ছিল। সাকিবও তার তুলনায় খারাপ খেলেছে।’
নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে অতৃপ্তি আছে সাকিবেরও। তবে পিসিএলে যেন পুরোই সন্তুষ্ট তিনি। টুর্নামেন্টজুড়ে অব্যবস্থাপনা আর বিশৃঙ্খলা থাকলেও জাতীয় দলের অধিনায়ক সেগুলোকে দেখছেন ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে, ‘হয়তো কিছু সমস্যা ছিল, কিন্তু আয়োজকদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। নিজের কথাই বলি, আমার খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমি তাদের বলেছি আমাকে ঢাকা ফিরতে হবে। তারা সঙ্গে সঙ্গে আমার টিকিটের ব্যবস্থা করেছে।’

No comments

Powered by Blogger.