অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করুন -হাসপাতাল পরিচালকের ওপর হামলা

নয় দিন পার হয়ে গেল, কিন্তু জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম মুহিবুল্লাহর ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে যে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছিল, তাদের গ্রেপ্তার ও আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো না। এ ব্যর্থতা যদি পুলিশ বা প্রশাসনের হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্ন জাগে, এদের ওপর ভরসা করে কি আইনশৃঙ্খলার উন্নতি আশা করা যায়? অভিযুক্ত কয়েকজন অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা কি এতই দুঃসাধ্য?
৩ নভেম্বর হাসপাতালের পরিচালকের ঘরে ঢুকে সন্ত্রাসীরা ভাঙচুর ও পরিচালককে লাঞ্ছিত করে তাঁর মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। তাদের কথামতো চলার হুমকি দেওয়ার দুঃসাহসও তারা দেখায়। এ ঘটনায় চারজনকে আসামি করে মামলা হয়। পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করলেও সে এই ঘটনায় অভিযুক্ত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া এ ব্যাপারে আর কোনো অগ্রগতিও নেই। সন্ত্রাসীদের খুঁটির জোর কি এতই বেশি যে তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করার সাধ্য কারও নেই? এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হোক। কারণ স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, সন্ত্রাসীরা যে-ই হোক, তারা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না। এখন সে কথার বাস্তবায়ন দরকার।
জানা গেছে, একদল সন্ত্রাসী হাসপাতালে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে চিকিত্সাসেবার কাজে বাধা দেয়। তাদের কাজ হলো রোগী ভাগিয়ে বাইরে নিয়ে যাওয়া। তারা হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ব্যবসা করতে চায়। বিভিন্ন সময় দরপত্র কার্যক্রমে সন্ত্রাসীদের হস্তক্ষেপ করার অভিযোগও রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব অনৈতিক কাজে সব সময় বাধা দেয়। ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা পরিচালকের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি নিয়ম অনুযায়ী সেবা কার্যক্রম চালাতে না পারে, তাহলে তো সরকারেরই সেটা দেখা দরকার। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, থানার পুলিশের যেন কোনো গরজ নেই।
এটা সত্যি দুঃখজনক যে সরকারি হাসপাতালগুলো বহিরাগত সন্ত্রাসীদের উত্পাতে বিপর্যস্ত। এর আগে আমরা দেখেছি, পঙ্গু হাসপাতালে একশ্রেণীর দালাল রোগীদের হাসপাতালে যেতে বাধা দেয়। তারা নানাভাবে সরল রোগীদের প্রভাবিত করে। তাদের বাধা দিলে ভাঙচুর করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালেও দেখা যায়, রোগীদের ওষুধ-পথ্য নিয়ে একশ্রেণীর সন্ত্রাসী ব্যবসা করে। উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কথা সরকার সব সময় বলে আসছে। কিন্তু সেটা করতে হলে হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী চক্রের অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে পুলিশ ও প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
হূদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিত্সক ও কর্মচারীরা হামলার প্রতিবাদ ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন। আমরা আশা করব, থানা-পুলিশ অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদানের উদ্যোগ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.