কোনো ছাড় না দেওয়ার ইঙ্গিত মনমোহন সরকারের- চীন-ভারত সীমান্ত সংলাপ

ত্রয়োদশ সীমান্ত সংলাপে ভারতের কাছ থেকে কিছুটা নমনীয় মনোভাব আশা করছে চীন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকার সীমানার বিষয়ে কোনো ছাড় দেবে না—এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার ভারতে দুই দেশের মধ্যে এই সীমান্ত সংলাপ শুরু হয়। সীমান্ত সংলাপে অরুণাচল প্রদেশের ওপর চীনের দাবির বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে চীন তিব্বতের দক্ষিণাঞ্চল হিসেবে অভিহিত করে থাকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে চীনের দাবি কমপক্ষে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং এলাকাটি তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক। তবে ভারতীয় পক্ষ এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেবে না—এমন ইঙ্গিত দিয়েছে।
দুই দিনের এ সংলাপে ভারতীয় পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণন এবং চীনা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী দাই বিংগোও। সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তবে সংলাপ শুরুর আগে ভারতীয় পক্ষ ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই আলোচনা করার আশাবাদ জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে ভারতীয় কর্মকর্তারা সীমান্তে চীনের সেনা মোতায়েনের বিষয়টি উত্থাপন করবেন। ভারত সীমান্তে ৩০ ডিভিশন সেনা মোতায়েন করে রেখেছে চীন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, চীনের সেনারা প্রায়ই সীমানা লঙ্ঘন করে অরুণাচল প্রদেশে ঢুকে পড়ছে। এ ছাড়া চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নবগঠিত ডিপার্টমেন্ট অব বাউন্ডারি অ্যান্ড ওশেন অ্যাফেয়ার্সের ভূমিকা সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে ভারত।
মনমোহন সিংয়ের সরকার সম্প্রতি অরুণাচলে আরও দুই ডিভিশন সেনা মোতায়েনের অনুমোদন দেওয়ায় সীমান্ত সমস্যা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, নিরাপত্তার স্বার্থেই ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে চীন তিব্বতে সড়ক ও রেল যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করছে এবং ভারত সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ বসানোর পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতও সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশে সড়কব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে। এদিকে সীমান্তে ভারতের সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানার পর চীনও সীমান্তে আরও সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা।
গত সপ্তাহে ভারতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিএম কৃষ্ণ বলেন, সীমান্তের সমস্যাটি জটিল এবং এর সম্মানজনক নিষ্পত্তির জন্য ধৈর্য ও সময় দরকার। চীনা বিশ্লেষকেরা বলেছেন, সীমান্ত সমস্যা সমাধানে চীন-রাশিয়া চুক্তি ভারতের সঙ্গে চীনের সমস্যা সমাধানে মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে। চীনের সরকারি কর্মকর্তারা জানান, সীমানা নিয়ে তাঁদের সরকারের মাথা ঘামানোর একটি বড় কারণ সাম্প্রতিক উইঘুর বিদ্রোহ। কমিউনিস্ট সরকারের আশঙ্কা, উইঘুর বিদ্রোহীরা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে তৎপর তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এর আগে ভারত-চীন দ্বাদশ সীমান্ত সংলাপটি হয়েছিল বেইজিংয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে।

No comments

Powered by Blogger.