ইরানের সশস্ত্র বাহিনী পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত: মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভি

বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিট পরিদর্শনে মুসাভি
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় বুশেহর বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটের কাজ শুরু হয়েছে। ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভির উপস্থিতিতে এ ঘাঁটির কার্যক্রম শুরু হয়। এ ঘাঁটি পরিদর্শনকালে জেনারেল আবদুর রহিম মুসাভি বলেছেন, ইরানের স্থল ও আকাশসীমা এবং ইরানি জাতিকে রক্ষা করতে সশস্ত্র বাহিনী পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত রয়েছে এবং এ ব্যাপারে শত্রুকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না।"

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ইরানের প্রধান নীতি হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। দুটি অঙ্গনে অর্থাৎ একদিকে ইরানের সীমান্তে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অন্যদিকে ইরানের আশেপাশের এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করা ইরানের প্রতিরক্ষা নীতির অংশ। স্থল, আকাশ ও সমুদ্র সীমায় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ইরান। বিশেষ করে বাইরের হুমকি বজায় থাকায় ইরান শত্রু গতিবিধির ওপর গভীর নজর রাখছে এবং আগ্রাসন কিংবা হুমকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কুণ্ঠাবোধ করছে না।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীতে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ইরানের বিমান বাহিনী এতোটাই শক্তি অর্জন করেছে যে, যেকোনো অভিযান চালানোর ক্ষমতা তাদের রয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় থিঙ্কট্যাঙ্ক 'আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট'র মতে, আত্মরক্ষার জন্য ইরান অত্যন্ত শক্ত ও মজবুত প্রতিরক্ষা সামগ্রী তুলেছে।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ বাকেরি গত সপ্তাহে আইআরজিসির কমান্ডারদের এক সমাবেশে বলেছেন, "শত্রুরা ইরানের সামরিক প্রস্তুতি,  সক্ষমতা, ইরানিদের মনোবল ও সাহসিকতা সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত আছে। তারা এটাও উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, নিজ ভূখণ্ড, জনগণ ও ইসলামি বিপ্লবী আদর্শ রক্ষার প্রশ্নে ইরানিরা কোনো ছাড় দেবে না।" ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাতামি বলেছেন, "যতদিন পর্যন্ত শত্রুর হুমকি বজায় থাকবে ততদিন পর্যন্ত ইরানের প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধির প্রক্রিয়াও অব্যাহত থাকবে।"

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এসব বক্তব্য থেকে ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা রক্ষার বিষয়ে ইরানের নীতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে ইরানের কৌশলগত তিনটি নীতি রয়েছে। প্রথমত, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি ইরান মনে করে আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব এ দেশগুলোকেই নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে অবাধ বাণিজ্য ও জাহাজ চলাচল নিশ্চিত করতে হবে এ অঞ্চলের দেশগুলোকেই। এ কারণে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে 'কোয়ালিশন অব হোপ' বা 'প্রত্যাশার জোট' নামে যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছেন।

তৃতীয়ত, আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইরান এ অঞ্চলের দেশগুলোকে আগাম হামলা না চালানোর বিষয়ে চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের এসব নীতি থেকে বোঝা যায়, যেকোনো হুমকি ও আগ্রাসন মোকাবেলায় ইরান আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলার ওপর জোর দিচ্ছে। যারা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায় তাদের ব্যাপারেও ইরান স্পষ্ট নীতি নিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.