ফ্যাসিবাদের পথে ভারত by তারিক এ আল মাঈনা

তথাকথিত বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হাজার হাজার সৈন্য নিয়ে কয়েক দশক ধরে স্বায়ত্বশাসন ভোগ করা অঞ্চলে হামলা চালানো, স্থানীয় নেতাদের গ্রেফতার করা, স্থানীয় যোগাযোগব্যবস্থাকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেয়া, দীর্ঘ দিনের আন্তর্জাতিক প্রস্তাবটি জঘন্যভাবে বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়টি কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? বিজেপি সরকারের অধীনে থাকা ভারত ঠিক এই কাজগুলোই করেছে।

কাশ্মীরে সাম্প্রতিক আগ্রাসন ও ভারতীয় সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ বাতিল করার মানে হচ্ছে ইতোমধ্যেই ফ্যাসিবাদের পথে চলতে থাকা ভারতীয় গণতন্ত্র আরো বিপদে পড়ল। ভারতের হিন্দুত্ববাদী গেরুয়া ব্রিগেড ভারতের সংখ্যালঘুদের জীবনকে মারাত্মক বিপদগ্রস্ত করে তুলছে। হিটলারের নাৎসি ব্রিগেডের স্মৃতি উস্কে দেয়া এসব হিন্দু চরমপন্থী স্রেফ গরুর গোশত খাওয়ার অপরাধেও লোকজনকে পিটিয়ে হত্যা করছে। গরুর কারণে নয়, আসলে হতভাগা লোকগুলোর ধর্মের কারণে তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে আমেরিকান-ইন্ডিয়ান ও সেন্টার ফর প্লুরালিজমের সভাপতি মাইক গাউস বলেছেন, সহিংসতা কয়েকজনের আত্মাকে শান্তি দিতে পারে, কিন্তু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। আমাদের প্রয়োজন ন্যায়বিচার। আমরা প্রতিশোধের সীমাহীন বৃত্ত চাই না।

তিনি বলেন, আমরা সহিংসতার কথা বলি না। এটা সবাইকে আহত করে। হিন্দু ও হিন্দুবাদ কোনো সমস্যা নয়, যেভাবে ইসলাম কোনো সমস্যা নয়, কখনো ছিলও না। তবে তাদের মধ্যে আইএসআইএসই সমস্যা হয়েছে, ঠিক একইভাবে হিন্দুত্ববাদী শক্তিই সমস্যা।

তিনি বলেন, ভারত ও বিশ্ব যদি এই সহিংসতা বন্ধ না করে তবে হিন্দু সংখাগরিষ্ঠ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সবাই হেরে যাবে।

তিনি বলেন, ভারতের সাফল্য কে না চায়। আমরা সবাই ভারতের জন্য সর্বোত্তমটা চাই।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মোদি সরকারের কাজ জাতির জন্য ক্ষতিকারক। তিনি নোট বাতিল করেছেন, রাফাল চুক্তি করেছেন, জিএসটি করেছেন, কৃষকদের জন্য বিপর্যয়কর কাজ করেছেন। এখন তিনি কাশ্মীর নিয়ে খেলছেন।

তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজনের সম্মতি ছাড়াই অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার ফলে অনেক বিপদের মুখে পড়বে ভারত।

তিনি বলেন, প্রতিবাদ করার স্বাধীনতা না দিয়ে, কথা বলার স্বাধীনতা রুদ্ধ করে দিয়ে ভারত কি তিয়ানানমেন স্কয়ারের উদাহরণ অনুসরণ করছে না?

ভারত ১৯৭০-এর দশকেও একই পথে হেঁটেছিল। ওই সয় এক ব্যক্তির শাসন দেশকে ধ্বংস করছিল। আমেরিকান ব্যবসায়ীদের চলে যেতে বলা হয়েছিল, কোক ও আইবিএমের মতো কোম্পানিগুলোকে বিদায় করা হলো, বেশ কয়েকটি ব্যাংক জাতীয়করণ করা হয়। মোদির সরকারও এখন ওই পথে হাঁটছেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদি ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মনে করেন না যে সংলাপে সমস্যার সমাধান হতে পারে। তারা জাতির দীর্ঘ মেয়াদি নিরাপত্তার মূল্যে তাদের ঘাঁটিকে তুষ্ট রাখছেন। মোদির ঘাঁটি ভ্রান্তভাবে ভিন্নমতালম্বীদের দমন করা ও কাশ্মীরী জনগণকে শাস্তি দেয়ার নীতিতে বিশ্বাস করে।

তিনি বলেন, লজ্জাজনক বিষয় হলো, হলুকাস্টের আগে জার্মান জনগণের মতো ভারতীয়রাও নীরব রয়েছে এবং কাশ্মীরে গণহত্যা চলতে দিচ্ছে।

জনগণকে যদি কোণঠাসা করা হয়, তাদের হাতে কোনো বিকল্প না থাকে, তারা সন্ত্রাসবাদের আশ্রয় নেবে। ভারত যদি কসোভো, আফগানিস্তান ও ইরাকের পথে চলে, তবে আমেরিকার হাত আরো দুই দশক বাঁধা থাকবে।

আমাদের দায়িত্ব হলো প্রতিবাদ করা, আমেরিকার দীর্ঘ মেয়াদি স্বার্থেই লোকজনের অধিকার রক্ষার কথা বলা।

একটি মানবাধিকার সংস্থা যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছে তা এমন:

গত কয়েক দিনে ৩৮ হাজার ভারী অস্ত্রে সজ্জিত সামরিক অফিসারকে কাশ্মীরে আনা হয়েছে। বর্তমানে কাশ্মীর হলো বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকায়ন করা এলাকা। এখানে প্রতি ১০ কাশ্মীরীর জন্য রয়েছে একজন করে সশস্ত্র ভারতীয় সৈন্য।
  • মোদি কাশ্মীরে সব মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
  • মোদি কাশ্মীরে কোনো সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না।
  • মোদি সব সেল ফোন ও ল্যান্ড ফোন সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছেন।
  • মোদি সরকার সব পর্যটক ও হিন্দু তীর্থযাত্রীকে সরিয়ে নিয়েছে।
  • মোদি সরকার কাশ্মীর দখল করার জন্য সংবিধান বদল করেছে।

তিনি বলেন, কাশ্মীরী নেতারা কাশ্মীরীদের ওপর আসন্ন গণহত্যা বন্ধ করার জন্য বিশ্বের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। ওয়াশিংটনের জেনোসাইড ওয়াচ ইতোমধ্যেই ভারতে গণহত্যার সতর্কতা জারি করেছে।

মাইক যে বর্ণনা দিয়েছেন তা সত্যিই ভয়াবহ। বর্তমানে ফিলিস্তিনের গাজাকে বলা হয় বিশ্বের বৃহত্তম কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। এখানে লোকজনকে অমানবিকভাবে বসবাস করতে বলা হয়। কিন্তু ভারতের বর্তমান ও প্রাধান্যপূর্ণ মুসলিম কাশ্মীরকে রক্ষা করা না হলে আমার ভয় হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মর্যাদা পেয়ে যাবে এই কাশ্মীরই।

No comments

Powered by Blogger.