নেপালের সদ্যপ্রতিষ্ঠিত স্থিতিশীলতাকে যেভাবে হুমকিতে ফেলে দিচ্ছে একটি গোপন মাওবাদী সংগঠন

নেপালে গত কয়েক বছর ধরে এক  ধরনের স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। কিন্তু সরকারের সাথে দলত্যাগী একটি গ্রুপের সংঘর্ষের কারণে এই শান্তি অবস্থা হুমকির মুখে পড়ে যেতে পারে।

নেত্র বিক্রম চন্দ – যিনি ‘বিপ্লব’ নামেই বেশি পরিচিত – তিনি ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (সিপিএন) গঠনের পর থেকে গোপনে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী) থেকে পুস্প কামাল দহল (প্রচন্ড), বাবুরাম ভাট্টারাই এবং মোহান বায়ধিয়া ‘কিরন’ চলে যাওয়ার প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ দলের সেক্রেটারি  বিপ্লব এই দল গঠন করেন।

চন্দ ও বায়ধিয়া সে সময় কমিউনিস্ট পার্টি-মাওবাদী (রেভল্যুশনারি) নামে নতুন দল গঠন করেছিলেন কিন্তু চন্দ আদর্শের পার্থক্যের কথা বলে দল ছেড়ে দেন। এককালের এই মাওবাদী বিদ্রোহীরা এখন বিভিন্ন দল ও আদর্শের অনুসারী।

বিপ্লবের ধারণা এবং সমাজবাদের বিশ্বাস এখনও নেপালে কিছু মানুষকে আকর্ষণ করে। এ কারণেই সেখানে কমিউনিস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ দল শাসন করছে। কিন্তু বাস্তবে সমাজবাদের শুদ্ধ ধারণাটি এখন আর কেউ অনুসরণ করে না।

একটি বিষয় এই দেশে বজায় আছে। সেটা হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংসতায় জড়ানোর অভ্যাস এবং এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের উৎখাত করা। অতীতে আমরা দেখেছি, কিভাবে রাজতন্ত্র এবং স্বৈরাচারকে সফলভাবে পতন ঘটানো হয়েছে।

চন্দের দলের ক্যাডাররা সম্প্রতি কাঠমাণ্ডুতে বেশ কিছু বোমা বিস্ফোরণের সাথে জড়িত ছিল এবং এনসেল টেলিযোগাযোগ টাওয়ারে আগুন লাগানোর পেছনেও তারা জড়িত ছিল। নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির সরকার সিপিএনের ক্যাডারদের গ্রেফতার করেছে এবং এমনকি কিছু ব্যক্তিকে হত্যাও করেছে। এটা অতীতের নেপাল সেনাবাহিনী ও মাওবাদীদের যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়।

টেলিকমিউনিকেশান অপারেটর এনসেলে ধারাবাহিক কতগুলো বোমা বিস্ফোরণের পর নেপাল সরকার ১২ মার্চ চন্দের নেতৃত্বাধীন দলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তাদের সহিংস তৎপরতার ইতি ঘটেনি।

চন্দের নেতৃত্বাধীন সংগঠন বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানাধীন জমি ও ঘরবাড়ি দখলের কাজে জড়িত। কর্পোরেশান ও ব্যক্তির উপর বোমা হামলা করেছে তারা, অফিস জ্বালিয়ে দিয়েছে, বনধের ডাক দিয়েছে, ব্যক্তি ও মিউনিসিপ্যালিটিগুলো থেকে অর্থ নিয়েছে, এবং বোমা হামলা করে নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করেছে।

সংক্ষেপে বললে সিপিএন দল তাদের সাবেক নেতাদের সহিংস অতীতের পুনরাবৃত্তি করছে। এবং নেপাল সরকার চন্দের সাথে তাদের অতীত সম্পর্কের কারণে তাদেরকে ‘সন্ত্রাসী গ্রুপ’ আখ্যা দিতে পারছে না।

সরকার দ্রুত দলের সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে, সিপিএন দলকে নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, সেটা নেপালের নতুন সংবিধানের বিরোধী। সংবিধান অনুসারে কোন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা যাবে না।

সরকার ও সিপিএনের মধ্যে যে পাল্টাপাল্টি লড়াই শুরু হয়েছে, সেটা নেপালের সদ্য প্রতিষ্ঠিত শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। বিগত তিন বছরে নেপাল ধারাবাহিক ছয় শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, এবং দারিদ্র কমেছে, এবং ভবিষ্যতে এটার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলেও একটা ধারণা রয়েছে।

সিপিএন যেহেতু কোন ধরনের সমঝোতায় আসতে রাজি নয়, তাই সরকারকে তার পূর্ণ শক্তি দিয়ে তাদের কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করতে হবে। তা না হলে নতুন সংবিধান বাধাগ্রস্ত হবে এবং দেশের সদ্য প্রতিষ্ঠিত ফেডারেল প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থাও হুমকির মুখে পড়ে যাবে।

নেপালের সরকার ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশ শাসন করবে এবং পার্লামেন্টে তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ব্যাপক এই জনসমর্থনের অর্থ হলো এনসিপি দেশের বর্তমান স্থিতিশীলতা রক্ষার একটা সুযোগ এবং আগ্রাসী সিপিএনের মোকাবেলা করতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.