মার্কিন যুদ্ধবিমান নিয়ে অভিবাসী বন্দিশিবিরে হামলা চালিয়েছে আমিরাত: লিবিয়া

লিবিয়ার অভিবাসী বন্দিশিবিরে ৩ জুলাইয়ের হামলার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দায়ী করেছে দেশটি। লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নিয়ে অভিবাসী বন্দিশিবিরে হামলা চালিয়েছে আমিরাত। লিবিয়ার বিদ্রোহী নেতা খলিফা হাফতারের বাহিনীকে সহায়তার উদ্দেশে তারা বন্দিশিবিরটিতে এ প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছিল। তবে এ ব্যাপারে সিএনএন-এর কাছে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি আমিরাতি কর্মকর্তারা। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
৩ জুলাই অভিবাসী বন্দিশিবিরটিতে চালানো ওই হামলায় অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছে। লিবিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাথি বাশাগা বলেন, এই হামলার জন্য আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দায়ী করছি। তারা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নিয়ে হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে আরও বিশদ তদন্ত চলছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতই এ হামলা চালিয়েছে; এমন কোনও প্রমাণ রয়েছে কী? সিএনএন-এর এমন প্রশ্নের উত্তরে লিবিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাইলট ও টেকনিশিয়ানরা বিমানটির আওয়াজ শনাক্ত করেছেন। এর ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষমতা ছিল অনেক বেশি। এটি ২০১৪ সালে নিক্ষেপ করা বিধ্বংসী বোমার মতোই। ওই সময়েও আমিরাত লিবিয়ায় বোমাবর্ষণ করেছিল। লিবিয়ার সংঘাতে তারা হস্তক্ষেপ করে থাকে।
২০১৪ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন জানায়, তাদের বিশ্বাস সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর লিবিয়ায় গোপন বিমান হামলা চালিয়েছে। এদিকে ৩ জুলাইয়ের হামলায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। ইতোমধ্যেই সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা এমন আভাস দিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লিবিয়ার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে মঙ্গলবারের হামলার নিন্দা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বয়ে জরুরিভিত্তিতে একটি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
জীবনযাপনের মানের দিকে থেকে তেল-সমৃদ্ধ লিবিয়া একসময় আফ্রিকার শীর্ষে ছিল। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ছিল পুরোপুরি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তবে যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা ঐ ঐশ্বর্য নিশ্চিত করেছিল, সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ২০১১ সালে যখন পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হয়। তারপর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন সংঘাত। গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যার শিকার হওয়ার পর ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি মনোনীত সরকার রয়েছে। ওই কর্তৃপক্ষকে জাতীয় চুক্তির সরকার বা জিএনএ নামে অভিহিত করা হয়।  তবে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হাতে রয়ে গেছে।  পশ্চিমাঞ্চলে জিনএনএ’র কর্তৃত্ব থাকলেও পূর্ব ও দক্ষিণের বেশিরভাগ অঞ্চল হাফতার বাহিনী এলএনএ’র দখলে। গত এপ্রিল থেকে এ বাহিনী লিবিয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে লিবিয়ায় দুটি সরকার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদের মধ্যে একটি সরকারকে সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ। আরেকটি ফিল্ড মার্শাল হাফতারের নেতৃত্বাধীন। ত্রিপোলির আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে জাতিসংঘ। তুরস্ক, ইতালি ও যুক্তরাজ্যও এ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। আর হাফতার বাহিনীর সমর্থনে রয়েছে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও ফ্রান্স। তবে আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট নয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে (জিএনএ) সমর্থন করে এবং শান্তি আলোচনার আহ্বান জানায়। কিন্তু গত এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খলিফা হাফতারকে ফোন দিয়ে লিবিয়ার ব্যাপারে ‘যৌথ স্বপ্নের’ কথা বলেন।

No comments

Powered by Blogger.