ঢাকায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন: শিশুর মুটিয়ে যাওয়া রোধ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে

দেশে বয়সের তুলনায় ওজন বেড়ে  যাওয়া শিশুর সংখ্যা তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বিশ্বে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে শিশু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। গ্রামের চেয়ে শহরে মুটিয়ে যাওয়া শিশুর সংখ্যা বেশি। আর এক্ষেত্রে ছেলেরা এগিয়ে। এজন্য জীবনযাত্রার পরিবর্তন করতে হবে। বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস এন্ড সার্জনস (বিসিপিএস) মিলনায়াতনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক পেডিয়েট্রিক সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন। এন্ডোক্রাইন সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিইএসবি) এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে শিশু বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুরাইয়া বেগম তার মূল প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশে খুব তাড়াতাড়ি মুটিয়ে যাওয়া শিশুর সংখ্যা বাড়ছে।
এটি প্রতিরোধ করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন করতে হবে। খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। শিশুদের শারীরিক ব্যায়াম ও খেলাধুলা বাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, ফাস্ট ফুড বা জ্যাঙ্ক ফুড এড়াতে হবে।
শিশুদের অল্প অল্প করে খেতে হবে। টিভি দেখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিশুদের ঘুমানোর ঘরে টিভি রাখা যাবে না। খাওয়ার সময়ে টিভি দেখা নিষেধ। সর্বোচ্চ দু’ঘণ্টা টিভি দেখা যেতে পারে। ৩ বছরের নিচে শিশুকে টিভি না দেখানোই ভাল। ৩ থেকে ৬ বছরের একজন শিশু সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট টিভি দেখতে পারে। আর ৭ থেকে ১১ বছরের শিশু ৬০ মিনিট। তিনি বলেন, শিশুরা অতিরিক্ত প্রতিঘণ্টা টিভি দেখার কারণে ২ শতাংশ হারে মুটিয়ে যায়। এই শিশু বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রি-স্কুল শিশুদের ৩০ থেকে ৬০ মিনিট খেলাধুলা করতে হবে। স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ৬০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম ও খেলাধুলার মধ্যে থাকতে হবে। কিশোর-কিশোরীদের ৯০ মিনিট বিভিন্ন ব্যায়াম করতে হবে। এর মধ্যে সাইক্লিং, সাঁতারকাটা, জাম্পিং, ক্রিকেট ও টেনিস খেলতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বে গত ৪০ বছরে বয়সের তুলনায় ওজন বেড়ে যাওয়া শিশুর হার ৩০০ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশে স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে (৬ থেকে ১৫ বছরের) বয়সের তুলনায় মুটিয়ে যাওয়া শিশু ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, অতিরিক্ত ওজন ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, শহরে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, গ্রামে এক দশমিক ২ শতাংশ, ছেলেরা ৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মেয়েরা এক দশমিক ৫ শতাংশ শিশু দেখা গেছে। পিইএসবি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. হোসনে আরা বেগমের সভাপতিত্বে দিনব্যাপী বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিসিপিএস’র সভাপতি ও  ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ, বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ, সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. ফৌজিয়া মোহসিন, অধ্যাপক ডা. সৈয়দা আফরোজা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, মালয়েশিয়া ও ভারতের শিশু বিশেষজ্ঞ এবং দেশের চার শতাধিক শিশু চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে শিশুদের বিভিন্ন হরমোনজনিত রোগ ও ডায়াবেটিস সমন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেন চিকিৎসকরা। এতে ৬টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ও  গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.