ভেনিজুয়েলায় আবার আমেরিকার অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ

ল্যাতিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলায় সেনাবাহিনীর মুষ্টিমেয় কিছু সদস্যকে দিয়ে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা আবার ব্যর্থ হয়েছে। আমেরিকার উসকানিতে বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুয়াইদো এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভেনিজুয়েলার সেনাবাহিনী সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। গত মঙ্গলবার দিনভর গুয়াইদোর সমর্থক, সেনাবাহিনীর দলছুট কিছু সদস্য এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে প্রায় ১০০ জন আহত হন।
দিনশেষে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো শীর্ষস্থানীয় সেনা কমান্ডারদের পাশে নিয়ে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেন, সেনাবাহিনীকে তার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার যে চেষ্টা গুয়াইদো করেছিলেন তা ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদেরকে ‘গুরুতর অপরাধ’ করার দায়ে অভিযুক্ত করে প্রেসিডেন্ট গুয়াইদো বলেন, এই অপরাধীদের শাস্তি পেতে হবে।  এ ছাড়া, ভেনিজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ অ্যারিয়াজা বলেছেন, সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে ওয়াশিংটন ও সরকার বিরোধীদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রেসিডেন্ট মাদুরো দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
৩৫ বছর বয়সি সরকার বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদো মঙ্গলবার রাজধানী কারাকাসের উপকণ্ঠে ‘লা কারলোতা’ বিমান ঘাঁটিতে কয়েকজন সেনা পরিবেষ্টিত অবস্থায় ঘোষণা করেন, দেশের সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট মাদুরোর প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তিনি তার ভাষায় ‘ভেনিজুয়েলাকে মুক্ত করার অভিযান’ শুরু হয়েছে বলেও দাবি করেন। কিন্তু দিনের শেষে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকারীদের ধরাশায়ী করে প্রেসিডেন্ট মাদুরোর অনুকূলে দেশের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।
অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ভেনিজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির প্যাদরিনো লোপেজ বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনী দৃঢ়তার সঙ্গে দেশের সংবিধান ও বৈধ সরকারকে রক্ষা করেছে।
ভেনিজুয়েলায় অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার ব্যর্থতা স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন সরকারকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন হুমকি দিয়ে বলেছেন, ভেনিজুয়েলার ব্যাপারে সব পন্থা অবলম্বনের পথ খোলা রেখেছে ওয়াশিংটন। তিনি দাবি করেছেন, মাদুরো সরকারের প্রতি রাশিয়া ও কিউবা’সহ আরো কিছু দেশের সমর্থনের কারণে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা সফল হয়নি।
মার্কিন সরকার এমন সময় ভেনিজুয়েলায় তার ভাষায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় সমর্থন দিচ্ছে এবং দেশটিতে ত্রাণসাহায্য পাঠানোর চেষ্টা করছে যখন মাদুরো সরকার সেদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আমেরিকাকে দায়ী বলে মনে করছে। কারাকাস বলছে, আমেরিকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে দেশে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। ভেনিজুয়েলা সরকার মনে করছে, তেলসমৃদ্ধ দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লোভে ওয়াশিংটন সেদেশে সরাসরি হস্তক্ষেপের নীতি গ্রহণ করেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভেনিজুয়েলার বর্তমান পরিস্থিতি অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় নাজুক অবস্থায় রয়েছে। একদিকে সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট মাদুরোর প্রতি আনুগত্যের শপথ পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং সরকার সমর্থকরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামনে অবস্থান গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে বিরোধী নেতা গুয়াইদো আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে নিজ সমর্থকদেরকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।  ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা ক্ষুদ্ধ ও মর্মাহত অবস্থায় ভেনিজুয়েলার পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রাখছেন। শেষ পর্যন্ত ভেনিজুয়েলার পরিস্থিতিকে নিজেদের অনুকূলে নিতে মার্কিন কর্মকর্তারা হয়তো সামরিক হস্তক্ষেপ করতেও দ্বিধা করবে না। কিন্তু সে মার্কিন প্রচেষ্টা কতটুকু সফল হবে তা নির্ভর করছে ল্যাতিন আমেরিকার দেশটির জনগণ ও সেনাবাহিনী মার্কিন হস্তক্ষেপকে কীভাবে নেবে তার ওপর।

No comments

Powered by Blogger.