মোমেন-ল্যাভরভ বৈঠক: রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে রাশিয়া মানবিক সহায়তাসহ দেশটির সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে। মস্কো সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এ আশ্বাস দেন। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার মোমেন-ল্যাভরভ বৈঠক হয়। বৈঠকে মন্ত্রী মোমেন তার কাউন্টার পার্টকে বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থা ব্রিফ করেন। তিনি মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের রাখাইনে নিরাপদ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত করার বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রভাবশালী ৫ সদস্যের অন্যতম রাশিয়ার সক্রিয় সমর্থন কামনা করেন। মন্ত্রী বিশেষভাবে রাশিয়ার কাছে একটি বিষয় চান তা হল- রাখাইনে প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারকে যেন মস্কো উৎসাহিত করে। মিস্টার ল্যাভরভের সঙ্গে আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আসিয়ান জোটের অন্যান্য দেশগুলোকে সম্পৃক্ততার বিষয়টিও অবহিত করেন।
জবাবে ল্যাভরভ সংম্পৃক্তকরণে ঢাকার ওই আইডিয়াকে স্বাগত জানান। অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে দুই মন্ত্রীর আলোচনা হয় জানিয়ে সেগুনবাগিচার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে মোমেনের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই তার প্রথম মস্কো সফর। তবে দ্বিপক্ষীয় আমন্ত্রণে সফরের বিবেচনায় এটি তার তৃতীয় বিদেশ সফর। মন্ত্রী মোমেন এর আগে জানুয়ারিতে তার প্রথম বিদেশ সফরে ভারতে এবং দ্বিতীয় দ্বিপক্ষীয় সফরে চলতি মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে ওয়াশিংটন যান।
বিজ্ঞপ্তি মতে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে মোমেনের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। যার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট রিজিওনাল এবং বহুপক্ষীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুও ছিল। বৈঠকে মন্ত্রী একাত্তরের দুর্দিনে বাংলাদেশের প্রতি রাশিয়ার যে অকুন্ঠ সমর্থন ছিল সেটি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পূণর্গঠন এবং পূনর্বাসন প্রক্রিয়ায় দেশটির যে উদ্যোগ ছিল তা স্মরণ করে দুই দেশের সম্পর্কের বিদ্যমান অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ড. মোমেন রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য  সম্পর্ক প্রত্যাশিত লেভেলে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করেন। একই সঙ্গে তিনি দেশটির বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে নব প্রতিষ্ঠিত হাইটেক পার্কসহ বিশেষ ১০০টি অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। জবাবে ল্যাভরভ বলেন, সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক সম্মেলনই হতে পারে রাশিয়ার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের প্রতি আকৃষ্ট করার উপযুক্ত মাধ্যম (প্লাটফর্ম)।
ড. মোমেন ইউরোশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নের সদস্য হিসাবে রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের কোটা ও শুল্ক মুক্ত সুবিধা চালুর অনুরোধ জানান। মন্ত্রী এ-ও বলেন, ওই ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশ শিগগির একটি সমঝোতা সই করতে যাচ্ছে। দুই মন্ত্রী রাশিয়ার সহায়তায় বাংলাদেশে হতে যাওয়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সিগনেচার ইনশিয়েটিভ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুরের শান্তিপূর্ণ অগ্রগতিতে উভয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। দুই মন্ত্রী বাংলাদেশে গ্যাজপ্রমের কার্যক্রমেও সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা দুই সরকারের মধ্যে প্রযুক্তিগত সহায়তা সম্পর্কিত বৈঠকগুলো নিয়মিত হওয়ার প্রশংসা করেন। তারা দুই দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়েরও তাগিদ দেন। তারা দুই দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যে সহায়তামূলক সম্পর্ক তাতেও তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। মন্ত্রীদ্বয় আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সম অবস্থানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠকের পর দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ে মন্ত্রী মোমেনের বৈঠক হয় বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.