প্রশ্নের সম্মুখীন ভারতের ‘ভিন্টেজ’ সেনাবাহিনী

চীনকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র যে সেনাবাহিনীটিকে সাহায্য, সমর্থন করে যাচ্ছে সেটির জন্য এ ঘটনাটি হতাশাজনক। পাকিস্তানি এক বিমানের সঙ্গে ডগফাইটে হেরে যায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিমান। ঘটনার শেষ হয় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ওই ভারতীয় পাইলট আটক ও পরে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মহানুভবতায় তার মুক্তির মাধ্যমে। বলতেই হয়, সোভিয়েত আমলে তৈরি বিমান মিগ-২১ আসলেই একটু কম ভাগ্যবান ছিল।
প্রায় ৫ দশক পরে ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে এত গভীরে গিয়ে হামলা চালানোর ঘটনাটি নিঃসন্দেহে মানুষ অনেক দিন মনে রাখবে। প্রথমেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতীয় হামলা বিশ্লেষকদের হতবাক করে দিয়েছিল। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় যা হয়েছে তা কখনই আশা করেনি ভারত। তারা এমন একটা বাহিনীর কাছে ২টি বিমান হারিয়েছে যারা আকারে তাদের অর্ধেক ও যাদের পেছনে ভারতের তুলনায় অতি সামান্য সামরিক বাজেট খরচ করা হয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনী এখন একটি সংকটপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
যদি আগামীকাল যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে ভারত তার সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ১০ দিনের অস্ত্র সরবরাহ করতে পারবে। এটি তাদের সরকারেরই ধারণা। দেশটির সেনাবাহিনীর ৬৮ ভাগেরও বেশি অস্ত্র পুরোনো আমলের। যাকে ভিন্টেজ অস্ত্র বলা হয়ে থাকে। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক বছর ধরেই ভারতকে তার মিত্রে পরিণত করতে চেষ্টা চালিয়েছে। এর একমাত্র কারণ হতে পারে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ানো চীনের জন্য একটা হুমকি সৃষ্টি করা।
একদিকে যেমন ভারতের সঙ্গে মিত্রতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র অপর দিকে পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা দেশটির দীর্ঘ মিত্রতারও ইতি টানার আভাস দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কোনো ধরনের সাহায্যই করছে না পাকিস্তান। গত এক দশকে ভারতের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি শূন্য থেকে ১৫ বিলিয়নে গিয়ে ঠেকেছে। তবে পাকিস্তান এখনো যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর অস্ত্র কিনে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছে যে, গত কয়েকদিনের সংঘর্ষে তারা পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসলামাবাদ এ দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ এফ-১৬ বিমান পাকিস্তানের কাছে বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্রই। বিক্রয়ের সময় চুক্তি হয়েছিল যে, এ বিমান শুধুমাত্র জঙ্গি দমনে ব্যবহার করা যাবে। তাই ভারতের বিরুদ্ধে এ বিমান ব্যবহার হবে চুক্তিভঙ্গ। তবে পাকিস্তান বারবার অস্বীকার করে আসছে যে তারা সেদিনের অভিযানে এফ-১৬ পাঠিয়েছিল।
২০২৪ সালের মধ্যেই পৃথিবীর সবথেকে বেশি মানুষের দেশে পরিণত হবে ভারত। দেশটির চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বিশাল সীমান্ত রয়েছে। তাই চীন যখন ক্রমাগত আগাচ্ছে তখন তাকে থামাতে ভারতের মতো একটি রাষ্ট্র দরকার যুক্তরাষ্ট্রের। তবে এখনো ভারতের এই বিশাল সেনাবাহিনীর জন্য অর্থায়ন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে গেছে। গত বছর ভারত তার সামরিক বাজেট ঘোষণা করে ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে চীনের সামরিক বাজেট প্রায় ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে ভারত তার সেনাবাহিনীর জন্য কত ব্যয় করে সেটি এখনো প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হচ্ছে এই অর্থ কোথায় ব্যয় করা হয়?
এই অর্থের বেশিরভাগই ব্যয় হয় প্রায় ১২ লাখ সেনার বেতন দিতেই। এ ছাড়া রয়েছে তাদের পেনশনের খরচও। তাই সেনাবাহিনীর উন্নয়নে এই অর্থ খুব কমই ব্যয় করা হয়। ভারত সরকার দাবি করছে যে তারা তাদের নাগরিকদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করছে। কিন্তু এদিকে চীন ভারতের চারদিকে সমুদ্র ও স্থলে তার প্রভাব বাড়িয়ে তুলছে। এভাবে চীনের কাছে পিছিয়ে পড়ছে ভারত। সামরিক সরঞ্জাম কেনা বেশিরভাগ দেশের জন্যই অনেক সময়ের বিষয়। কিন্তু ভারত তার থেকেও বেশি ধীরে এগুচ্ছে। তাছাড়া দেশটিতে দুর্নীতির একটি প্রভাব তো রয়েছেই।

No comments

Powered by Blogger.