খরস্রোতা তিস্তা এখন ধু-ধু বালুচর

আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে...। পাঠ্যবইয়ে এই ছড়াটি পড়লেও বৈশাখ মাস আসতে এখনো অনেক দিন বাকি কিন্তু তার আগেই এক সময়ের খরস্রোতা তিস্তা নদী এখন পানি শূন্য হয়ে কঙ্কাল রূপ ধারণ করে ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। যে তিস্তা নদীকে নিয়ে গাথা হয়েছিলে নানা ধরনের ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া গান, বাড়িতে নতুন জামাই এলে বা নতুন মেহমান যে নদীর বইরাতি মাছ ছিলো খাবারের উপকরণ আজ সেই নদীর বুক চিরে চলছে চাষাবাদ। আর নদী নির্ভর শত শত জেলে পরিবার নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো তার আজ বেকার। বর্তমানে ভারতের গজল ডোবায় তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করায় এবং পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয়ায় ধীরে ধীরে তিস্তা নদী পানি শূন্য হয়ে কঙ্কালসারে পরিণত হয়েছে। এখন তিস্তায় শুধুই ধু-ধু বালুচর। ভারতের সঙ্গে সরকারের দ্বি-পাক্ষিক পানি চুক্তির সুফল বাস্তবায়ন না হওয়ায় তিস্তা তীরবর্তী মানুষেরা নিদারুণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বর্ষার সময় ভারত অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেয়ায় নদীর দু’পারের মানুষের জমি, ঘরবাড়ি ভেঙ্গে সর্বস্বান্ত করে দেয়।
খরা মৌসুমে পানির অভাবে ইরি বোরোসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ করতে পারে না নদী তীরের মানুষ। এক সময় সরাসরি নৌকা মাল বোঝাই করে পাল তুলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেত, বর্তমানে সেগুলো এখন কল্পকাহিনীর মতো। নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে শতাধিক মানুষ। এ ছাড়াও সরকারের নদী শাসনের পরিকল্পিত পরিকল্পনার অভাবে নদীর মাঝখান উঁচু হয়ে পানি দু’পারে প্লাবিত হয়। নদীর ড্রেজিংয়ের কাজ আদৌ হয়েছে কিনা তা এই এলাকার মানুষ জানে না অথচ নদী ড্রেজিং করে নদীর পানির গতিপথ সচল করলে একদিকে যেমন নদী ভাঙন কমে যাবে অন্যদিকে কৃষক নদীর পানি দিয়ে সেচ কাজ চালাতে পারবে, এর ফলে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ খরচ কমে যাবে অন্যদিকে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। যৌবন হারানো খরস্রোতা তিস্তার এই ধরনের কঙ্কালসার চেহারা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কখনো ছিল না। সরকার তিস্তা নদী জরুরি ভিত্তিতে ড্রেজিং কৃষি নির্ভর রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলাকে কৃষিতে স্বাবলম্বীর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে এ কামনা করছে এলাকাবাসী।

No comments

Powered by Blogger.