নির্বাচনের এজেন্ডা থাকলে সংলাপে যাওয়া বিবেচনা করা হবে -সিলেটে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা by ওয়েছ খছরু

নির্বাচন নিয়ে এজেন্ডা থাকলে ঐক্যফ্রন্ট ‘সংলাপ’ বিষয়ে বিবেচনা করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কি নিয়ে সংলাপের আহ্বান করেছেন তা আমি জানি না। তবে গতবারের মতো যদি সংলাপ হয় তাহলে সে সংলাপ কখনই অর্থবহ হবে না। এখন আমাদের এজেন্ডা তো একটাই- নির্বাচনকে বাতিল করতে হবে, পুনরায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি গতকাল দুপুরে সিলেটের ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন। মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘যেখানে দেশের জনগণের অধিকার প্রয়োগ করতে দেয়া হয়নি এবং এতে করে দেশের যে একটা বড় ক্ষতি হয়ে গেছে- এই বিষয়টি যদি উনারা বুঝেন আর আমাদেরকে জানান- তখনই আমরা বিবেচনা করবো। তবে এটা নির্ভর করবে তখনকার সময়ের উপর।’
গত ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট চলাকালে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার আজিজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষে উপজেলা ছাত্রদল নেতা সায়েম আহমদ সোহেল নিহত হন। তার স্বজনদের সান্ত্বনা জানাতেই গতকাল ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সিলেট আসেন।
বেলা সাড়ে ১১টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছান। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা হলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী, মহাসচিব হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব।
প্রথমেই তারা ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। পরে মাজার প্রাঙ্গণেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মাজার জিয়ারতের সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সিলেট-৩ আসনের সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, জেলার সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, আজমল বখত সাদেক, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী, ইমরান আহমদ, বালাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মিয়া সহ সিনিয়র নেতারা।
বিগত নির্বাচনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দখলদারী সরকার বাংলাদেশের জনগণের অধিকারকে হরণ করে নিয়ে গেছে এবং তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। জনগণের রায়কে তারা ডাকাতের মতো ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। সারা দেশেই সকলের চোখে-মুখে একটা শোকের চিত্র ফুটে উঠেছে। এর কারণ জনগণ তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচন অথবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সরকারের পরিবর্তন ঘটায় না এমনকি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব সেটারও কোনো পরিবর্তন ঘটায় না। তাই এই নির্বাচনগুলো খুব একটা মুখ্য ব্যাপার না।
নির্বাচন কমিশনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে নির্বাচন কমিশন আছে সেই কমিশনের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীই দেখেছে যে, কতোটা অযোগ্য এ নির্বাচন কমিশন। যাদের কোনো যোগ্যতাই নেই নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন কি রকম হবে- এ রকম প্রশ্নেরই এখন আর কোনো প্রয়োজন নেই।’
জাতীয় নির্বাচনকে বাতিল করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বারবার বলছি যে, গত জাতীয় নির্বাচনকে বাতিল করলে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে জনগণের রায়ের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠিত সরকার গঠন করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য এবং সকল দলের অংশগ্রহণে।’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যফ্রন্ট অটুট আছে  সামান্যতম কোনো সমস্যা নেই ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে। রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের কিছুটা অমিল থাকতেই পারে- এটাই স্বাভাবিক।  কিন্তু আমাদের ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই।
নিহত সোহেলের বাড়িতে মির্জা ফখরুল: দুপুরে সিলেটে হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। পরে তারা বালাগঞ্জের আজিজপুর গ্রামে নিহত ছাত্রদল নেতা সোহেলের বাড়িতে যান। প্রথমে তারা সোহেলের কবর জিয়ারত এবং মোনাজাত করেন। পরে তার মাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন মির্জা ফখরুল। তাদের সান্ত্বনা জানানোর পাশাপাশি হাতে তুলে দেন নগদ ১ লাখ টাকা। পরে সোহেলের বাড়িতেই শোকসভায় বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ।
এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সোহেলের রক্তের প্রতিবাদ ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য হটাতে হবে এই সরকারকে। সিলেটসহ গোটা দেশের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে সরকারের বিদায়ের পথ সুগম করতে হবে। তবেই সোহেলদের আত্মদান কাজে আসবে। এ সময় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা আ স ম রব, কাদের সিদ্দিকী,  মোস্তফা মহসিন মন্টু, শফি আহমদ চৌধুরী, আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী, আব্দুল আহাদ খান জামান ও নিহত সোহেলের চাচাতো ভাই লুৎফুর রহমান বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, আবুল কাহের শামীম, আলী আহমদসহ সিনিয়র নেতারা।

No comments

Powered by Blogger.