কুয়েতে দূতাবাসে ভাঙচুর: ২১৫ বাংলাদেশিকে ফিরতেই হবে

কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ২১৫ বাংলাদেশিকে ফিরতেই হচ্ছে। তাদের বেতন ও ভাতাসহ সব ধরনের বকেয়া পরিশোধ করতে লেসকো কোম্পানিকে নির্দেশনা দিয়েছে কুয়েত সরকার। সব ধরনের বকেয়া বুঝিয়ে দেয়ার পরই তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন, বাঙালিরা  এককাপড়ে দেশে ফেরত যাক- এটা আমরা কোনো সময় কামনা করি না। বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে যেন মামলা করা না হয় এজন্য আমরা কুয়েত সরকারকে অনুরোধ করেছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাদের ছাড়িয়ে নিতে দেন দরবার করছি। তিনি বলেন, কুয়েতের নিজস্ব আইন রয়েছে। ওই আইন অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবে।
তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো। এদিকে কুয়েতে বসবাসরত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি মানবজমিনকে জানান, বেতন ভাতা ও আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) আদায় নিয়ে দূতাবাসে নালিশ করতে গিয়ে আমরা কোনো অপরাধ করিনি। লেসকো কোম্পানিতে গত তিন মাস ধরে বেতন হয়নি। তাই শ্রমিকরা নিজেদের পেটের তাগিদে এমনিতেই ক্ষুব্ধ ছিল। তাদের ক্ষোভকে আমলে না নেয়ার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ভাঙচুরের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও একটি কোম্পানিতে চাকরিরত এক বাংলাদেশি মানবজমিনকে বলেন, শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ প্রথমে ওই কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর কোম্পানির একজন কর্মকর্তা লিখিতভাবে আগামী ৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে বেতন পরিশোধ ও আকামা নবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু কোম্পানির ওই প্রতিশ্রুতিতে শ্রমিকরা আশ্বস্ত হননি। এজন্য কোম্পানির কর্মকর্তাকে দূতাবাস ত্যাগ করতে দিতে চাননি তারা। শ্রমিকদের আপত্তি উপেক্ষা করে লেসকোর প্রতিনিধিকে দূতাবাস কর্মকর্তা গাড়িতে তুলে দিতে চান। এরপরই হামলার ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের গ্রেপ্তার করানোর জন্য পুলিশ ডাকার বিষয়টি দৃষ্টিকটু ছিল। তবে অবস্থা দেখে কোম্পানির কর্মকর্তাকে পুলিশি সহায়তায় বের করে দিলে হয়তোবা এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতো না।
ভিডিও ফুটেজে চিহ্নিত দোষীরা
কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সংগ্রহ করা ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে হামলা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের নামে মামলা করা হবে। কুয়েতের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে। তবে নিরীহ বাংলাদেশি শ্রমিকদের মুক্তি দেয়া হবে। এদিকে আটক বাংলাদেশিদের কী হবে- এ নিয়ে ভাবনার মধ্যে পড়েছে দূতাবাস। কারণ, কুয়েত সরকার বাংলাদেশ দূতাবাস ভাঙচুর ও কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনাটি বেশ সিরিয়াসলি নিয়েছে। কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন, বাঙালিরা এক কাপড়ে দেশে ফেরত যাক এটা আমরা কোনো সময় কামনা করি না। কয়েক দিন আগেও ১৬ জনকে ফেরত পাঠাতে কুয়েত এয়ারপোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়।
দেন-দরবার করে এয়ারপোর্ট থেকে তাদের আমরা ফেরত এনেছি। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত।
কুয়েতের কোম্পানি লেসকোর সঙ্গে বিষয়টি মিটে গেলেও কী কারণে দূতাবাস ও কর্মকর্তাদের ওপর হামলা হয়েছে- তা মাথায় আসছে না। বাংলাদেশি ভাইয়েরা কেন এমন করতে গেলেন তা ভেবে পাই না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ দূতাবাসে ভাঙচুরের ঘটনায় আটক শ্রমিকদের মুক্ত করার চেষ্টা চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের মুক্ত করার চেষ্টা করছে সেখানকার কূটনীতিকরা। রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম বলেন, আমরা তাদের ছাড়ানোর জন্য ইতিমধ্যে কুয়েত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
আশা করছি, তাদের অপরাধকে খাটো করে দেখা হবে। এ বিষয়ে কুয়েত পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তারা আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, নিরীহ কোনো বাংলাদেশির বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবেন না তারা। তিনি বলেন, যে কোম্পানিতে বাংলাদেশি ওই শ্রমিকরা কর্মরত ছিলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। বিষয়টি সুন্দর সমাধানও হয়েছিল। কোম্পানি লেসকো আন্ডারটেকিং দিয়েছিল। তারা ৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে বেতন ও বকেয়া পরিশোধ করবে। পাশাপাশি আকামা পুনরায় নবায়নের বিষয়ে সম্মত হন। এদিকে লেসকো নামের কুয়েতি ওই কোম্পানিতে কয়েকশ’ বাংলাদেশি কাজ করছেন। তারা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, গত তিন মাস ধরে তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
এছাড়া, আকামা পরিবর্তনের সুবিধা না থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে তারা এই কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে শুরু করে কুয়েত। ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় চার লাখ ৮০ হাজার শ্রমিক নিয়েছে দেশটি। ওই বছর বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করার পর, ২০১৪ সালে আবার শ্রমিক নিয়োগ চালু হয়। এরপর ২০১৬ সালে পুরুষ গৃহকর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কুয়েত সরকার। কয়েক মাস পর ওই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হয়। এখন বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বৃহস্পতিবার কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ভাঙচুর ও কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনা শ্রম-বাজার আবারও ব্যাকফুটে চলে গেল।

No comments

Powered by Blogger.