পাটের লেমিনেশন ব্যাগ

পাটজাত পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত পাটের লেমিনেশন ব্যাগ  তৈরি করছে দেশের বৃহত্তম পাটকল খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিল। এ জন্য মিলে স্থাপন করা বিশেষ ইউনিটের নাম প্রিমিয়াম লেমিনেশন প্ল্যান্ট (পিএলপি)। অন্য ইউনিটগুলোতে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে লোকসান হলেও লেমিনেশন ব্যাগে লাভের মুখ দেখেছে মিলটি। তবে সক্ষমতা অনুযায়ী অর্ডার নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পিএলপি ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে কাজ শুরু করা হলেও বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় আগস্ট মাসে। এই ইউনিটে ৩০-৩৫ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ শ্রমিক কাজ করছে। মিলের তাতে তৈরি হেশিয়ান চটের ওপর পিএলপি মেশিনের মাধ্যমে লেমিনেটিং করে পাটের লেমিনেশন ব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে। নতুন এই ইউনিটে উৎপাদন হচ্ছে লেমিনেটেড ব্যাগ এবং স্লাইবার ক্যানশীট নামে দু’ধরনের পণ্য।
বীজ সংরক্ষণের জন্য দুই ধরনের লেমিনেটেড ব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে। এর একটি ১০ কেজি ও অন্যটি ২০ কেজি ওজনের। ১০ কেজি ওজনের ব্যাগের মূল্য ৫১ টাকা এবং ২০ কেজি ওজনের ব্যাগের মূল্য ৬১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দু’দফায় প্রায় ৩ লাখ পিস লেমিনেশন ব্যাগ উৎপাদন করছে ইউনিটটি। প্রথম দফায় বিএডিসির কাছ থেকে দুই প্রকারের ১ লাখ ৫২ হাজার পিস পাটের লেমিনেশন ব্যাগ অর্ডার আসে। বিএডিসিকে সেই ব্যাগ প্রদান করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বিএডিসি গত সপ্তাহে ১০ কেজি ওজনের ১ লাখ ৪০ হাজার পিস ব্যাগের অর্ডার দিয়েছে। এসব ব্যাগ উৎপাদনে কাজ চলছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে এসব পণ্য প্রদান করা হবে। শুধু ব্যাগই নয়, পিএলপি প্লান্টটিতে তৈরি হচ্ছে স্লাইভার ক্যানশীট। যা পাটকলগুলোতে সুতা রাখার কাজে ব্যবহৃত হয়। এই স্লাইবার ক্যানশীট খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯টি পাটকলের চাহিদা পূরণ করে বাইরে বিক্রি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন মিল কর্তৃপক্ষ। ক্রিসেন্ট জুট মিলের ডেপুটি ম্যানেজার (উৎপাদন) ও পিএলপি ইউনিট ইনচার্জ গোলাম রসুল রাকিব বলেন, ইউসেফ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এখানকার শ্রমিকদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলে কাজ করানো হচ্ছে। বিএডিসিকে এই পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। এই লেমিনেটেড ব্যাগে জলীয় বাষ্প প্রবেশ করতে পারে না। পণ্যের গুণগত মান ভালো থাকে। ফলে গম, ধানের বীজ, চিনি, ফিস ফিড, পোল্ট্রি ফিড, সার, আটা-ময়দা ও কীটনাশক মোড়কে পাটের লেমিনেশন ব্যাগ খুবই উপযোগী। বিক্রি বাড়লে মিলের এই ইউনিটটি আরো বেশি লাভজনক হবে। বিএডিসির শতভাগ অর্ডার নেয়ার সক্ষমতা এই ইউনিটের রয়েছে বলে তিনি জানান। ক্রিসেন্ট জুট মিলের মহাব্যবস্থাপক গাজী শাহাদাত হোসেন জানান, বিজেএমসির উৎপাদিত অন্য সব পণ্যে লোকসান হলেও এই প্লান্টটিতে উৎপাদিত লেমিনেশন ব্যাগ বিক্রি করে লাভ হচ্ছে। প্রথম দফায় কত টাকা লাভ হয়েছে তা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। এছাড়া বিজেএমসির পাটকলগুলোতে স্লাইভার ক্যানশীট নামে একটি পণ্যের প্রয়োজন হয়। এই স্লাইভার ক্যানশীটে সাধারণত সূতা রাখা হয়। এটাও এই প্লান্টে তৈরি করা হচ্ছে। শুধু ক্রিসেন্ট জুট মিলই নয়, খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯টি মিলের চাহিদা মিটিয়েও বাইরে বিক্রি করার সক্ষমতা রয়েছে। তিনি জানান, প্রথম দফায় উৎপাদিত পাটের লেমিনেশন ব্যাগ বিক্রি করে লাভ হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় অর্ডার পেয়েছি। ফেরুয়ারিতে এই পণ্য বিএডিসিকে প্রদান করা হবে। তবে এই ইউনিটের উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। অবশ্য বিক্রি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই পণ্যের বিষয়ে জানানো হয়েছে। রাজধানীতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বিজেএমসির অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে পাটের লেমিনেশন ব্যাগ প্রদর্শন করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.