মানববন্ধনে পুরো পরিবার: সড়ক দুর্ঘটনায় সন্তান হারানো মায়ের আকুতি

আমার ছেলে ঘরে ফিরবে। মা বলে ডাক দিয়ে বলবে খাবার দাও। বায়না ধরবে মোটরসাইকেল কিনে না দিলে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব না। আমি এখনো সেই অপেক্ষায় আছি। আমার ছেলে কখন ফিরবে। কান্না করতে করতে এখন আর আমার চোখে পানি নাই সব শুকিয়ে গেছে। চোখে শুধুই অন্ধকার দেখি। আমার যেন সব শেষ হয়ে গেছে। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব। অশ্রুসজল কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এক সন্তানের মা। চলতি বছরের ২রা জুলাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস টেকনোলজি (বিইউবিটি) বিবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দ মাসুদ রানাকে (২৫) মিরপুর ঈদগাহ ময়দানের পুলিশ বক্সের সামনে একটি বাসচাপা দেয়। পরে মাসুদ ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। বিমানবন্দর সড়কে দুই শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যখন দেশ উত্তাল তখন গণদাবি হিসেবে অনেকেই বাসচাপায় সন্তান হারানোর বিচার চাইছে। তারই ধারাবাহিকতায় 
ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে গতকাল মাসুদের মা-বাবা ও স্বজনরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন।
মানববন্ধনে নিহত মাসুদের মা সৈয়দা খোরশেদা বেগম বলেন, আজ আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাইতে এখানে এসেছি। আমার ছেলেকে বাসচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমার বুকটাকে যারা খালি করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমার মতো যেন আর কারো বুক খালি না হয়। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও অনুরোধ জানাই আমার ছেলে হত্যার যেন বিচার হয়। খোরশেদা বেগম বলেন,  ঘটনার দিন আমি ঘুমে ছিলাম। আমার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় আমার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। দুপুরের দিকে খবর পাই আমার ছেলে অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। আমার বিশ্বাস হয়নি সে অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। কারণ তার কোনো মোটরসাইকেল নাই। সে অ্যাক্সিডেন্ট করতে পারে না। তখন ছোট ছেলেকে নিয়ে আমি হাসপাতালে যাই। গিয়ে দেখি আমার কলিজার টুকরার মরদেহ সেখানে পড়ে আছে। আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারিনি সে মরে গেছে। তখন মনে হয়েছিল আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। কোনো কথা না বলে আমার ছেলে চলে যাবে এটা কখনো ভাবতে পারি নাই। তরতাজা ছেলেকে হারানোর শোক আমি কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছি না। বার বার মনে হচ্ছে মাসুদ ফিরে আসবে। এসে বলবে মা আমাকে খাবার দাও। আমাকে মোটরসাইকেল কিনে দাও। খোরশেদা বলেন, একটি মোটরসাইকেল কিনে দেয়ার জন্য সে আমাকে অনেক অনুরোধ করতো। অ্যাক্সিডেন্ট করবে ভেবে কিনে দিতাম না। এজন্য সে অনেক রাগ করতো। দুর্ঘটনার আগের দিন তার এক বন্ধুকে বলেছিল। আম্মুকে না বলে ভার্সিটি চলে যাব। এসে বলব আমি ভার্সিটি থেকে এসেছি। এজন্য সত্যিই সত্যিই ওইদিন আর আমাকে বলে যায়নি।
খোরশেদা বেগম আরো বলেন, অনেক কষ্ট করেও যখন শোক কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না তখন শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে সেই শোক আরো বেশি প্রখর হয়ে গেল। হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে তখন আর ঘরে থাকতে পারলাম না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আমার ছেলের বিচার চাইতে আজ মানববন্ধনে এসেছি। আমি চাই আমার ছেলেসহ বাসচাপায় নিহত সব মানুষের বিচার হোক। তিনি বলেন আমার স্বামী সৈয়দ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর একজন ব্যবসায়ী আর ছেলে গোলাম রাব্বী নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি শিক্ষার্থী ও মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস দুলন আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী। ২ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে আমার সুখের সংসার ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সব এলোমেলো হয়ে গেল।

No comments

Powered by Blogger.