ইরানের বিরুদ্ধে পম্পেওর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি ও বাস্তবতা

ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর গত ৪০ বছর ধরে আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে নানা ভিত্তিহীন অভিযোগ আরোপ ও শত্রুতামূলক আচরণ করে আসছে। আমেরিকার একটি বড় অভিযোগ হচ্ছে ইরান সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দিচ্ছে। আর এ অজুহাতে তারা এ পর্যন্ত ইরানের বিরুদ্ধে বহু পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৮মে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর এবং ইরানের বিরুদ্ধে ফের নিষেধাজ্ঞা বলবত করার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ১২টি শর্তে ইরানের সঙ্গে সংলাপে বসার প্রস্তাব দেন। এসব শর্তের মধ্যে আমেরিকার স্বেচ্ছাচারী মনোভাব ফুটে উঠেছে যা ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার স্পষ্ট লঙ্ঘন। ওই ১২টি শর্তের মধ্যে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া, ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি থেকে বিরত থাকা, মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলীতে হস্তক্ষপে বন্ধ করা এবং ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামীদের সমর্থন না দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। আমেরিকার দৃষ্টিতে মধ্যপ্রাচ্যে হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো প্রতিরোধ যোদ্ধারা হচ্ছে সন্ত্রাসী।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গতকাল (শুক্রবার) আবারো ইরানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের প্রতি সমর্থন দেয়ার অভিযোগ তুলে দাবি করেছেন, "ইরান মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে অস্ত্র ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।" তিনি ইরানের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিদ্বেষী নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আরো দাবি করেছেন, ইরানের উত্থান ঠেকানোর জন্য নিয়োজিত কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। একই সঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে শামিল হতে মিত্র দেশগুলোর প্রতিও আহ্বান জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও।
পম্পেও এমন সময় ইরানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন যখন আমেরিকা সৌদি আরবের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে তৎপর দায়েশসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রতি সর্বাত্মক সাহায্য সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অথচ এটা সবারই জানা আছে ইরান এ অঞ্চলে উগ্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইরাক ও সিরিয়ায় দায়েশ সন্ত্রাসীদের প্রতি আমেরিকা ও সৌদি আরবের সরাসরি সহযোগিতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বে সন্ত্রাসবাদের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। বিষয়টি খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও স্বীকার করেছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরাক ও সিরিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশে সন্ত্রাসীদের প্রতি মার্কিন সমর্থনের কারণে এ অঞ্চলে চরম নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি ও গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। সন্ত্রাসীদের প্রতি আমেরিকার সমর্থনের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে এ অঞ্চলে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামীদের দুর্বল করে দেয়া।
যাইহোক, ইসলামি ইরান তার সংবিধান অনুযায়ী বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো প্রতিরোধ শক্তিগুলোকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.