সেই ভবন এখন যেমন by মারুফ কিবরিয়া

জঙ্গি হামলার এক বছর পর গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডস্থ আর্টিজান বেকারির সেই ভবনটি বুঝে পান মালিক সাদাত মেহেদী। বেকারির ভবনটি বাস উপযোগী করে তুললেও বেশিরভাগ সময় তালা থাকে সেখানে। বাইরের কেউ আসা-যাওয়াও তেমন করেন না। বাড়ির প্রধান ফটকও নিরাপত্তারক্ষী কঠোর পাহারা দিয়ে রাখেন। হামলার দ্বিতীয় বার্ষিকীতে আজও গত বছরের মতো চার ঘণ্টার জন্য খোলা থাকবে স্থাপনাটি। এ সময়ে হামলায় নিহতদের পরিবার ও স্বজন এবং সর্বসাধরণ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবেন।
হামলার পর প্রায় এক বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল বাড়িটি। এরপর মালিক সাদাত মেহেদীকে হস্তান্তর করা হয়। গত বছর থেকে বাড়িটিতে পরিবার নিয়ে বসববাসের জন্য উপযুক্ত করেন তিনি। তবে খুব একটা থাকেন না তারা। স্ত্রী সন্তান নিয়ে বনানীর একটি ফ্ল্যাটে বাস করেন মেহেদী সাদাত। সরজমিনে দেখা যায়, হলি আর্টিজানের ওই বাড়িটি নিরাপত্তা কর্মীরা পাহার দিয়ে রেখেছেন। কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। লেকের পূর্ব পাশ দিয়ে লেক পাড়ে হাঁটার ব্যবস্থা থাকলেও হামলার পর থেকে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, জঙ্গি হামলার পর বাড়ির দেয়ালের বাইরের অংশে সাদা রঙ করা হলেও দরজা-জানালায় নতুন করে আর রঙ করা হয়নি। আর যেসব স্থানে ভাঙা হয়েছিল বা নষ্ট হয়েছিল সেগুলো মেরামত করা হয়েছে।
এছাড়া তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। নিরাপত্তাকর্মী মো. হোসেন বলেন, এটা এখন নিজে থাকার জন্য মালিক ঠিকঠাক করেছেন। তিনি পরিবার নিয়ে প্রায়ই আসা যাওয়া করেন। বাইরে থেকে তালা ঝোলানো প্রসঙ্গে এই নিরাপত্তাকর্মী বলেন. ভেতরে কুকুর আছে। খোলা রাখলেই বেরিয়ে আসে আর ঝামেলা হয়। তখন মেইন গেট সামলানো আর কুকুর সামলানো দুইটা নিয়ে বেকায়দায় পড়ি।
এজন্যই তালা ঝোলানো থাকে। বাড়িটিতে কে কে থাকেন এমন প্রশ্নের উত্তরে হোসেন বলেন, মালিক তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন। জানা গেছে, সাদাতের স্ত্রী সামিরা উত্তরাধিকার সূত্রে এই বাড়ির মালিক। ১৯৭৯ সালে ‘আবাসিক ভবন কাম ক্লিনিক গড়ে তোলার জন্য’ ডা. সুরাইয়া জাবিনকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল বাড়িটি। ১৯৮২ সালে ওই প্লটের একপাশে গড়ে তোলা হয় লেকভিউ ক্লিনিক। সুরাইয়ার মৃত্যুর পর প্লটের মালিক হন তার মেয়ে সামিরা ও সারা আহম্মদ। সামিরার স্বামী সাদাত মেহেদী তার বন্ধু নাসিমুল আলম পরাগসহ কয়েকজন মিলে ২০১৪ সালের জুনে গড়ে তোলেন হলি আর্টিজান বেকারি। জঙ্গি হামলার ছয় মাস পর গত বছরের ১০ই জানুয়ারি থেকে গুলশান এভিনিউর ?র‌্যাংগস আর্কেডের দ্বিতীয় তলায় স্বল্প পরিসরে হলি আর্টিজান বেকারিটি নতুন করে চালু হয়। সুপারশপ গোর্মেট বাজারের এক পাশে ৫০০ বর্গফুটের নতুন জায়গায় শুধু বেকারি পণ্য করছে হলি আর্টিজান। সেখানে একসঙ্গে ২০ জন অতিথি বসতে পারছেন। এদিকে গুলশানে আগের হলি আর্টিজানের ভবনটির পাশে আরেকটি অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তারা এখনো ভয়ের মাঝে থাকেন। সেই ভয়াল মুহূর্তের কথা মনে পড়লে শিউরে ওঠে শরীর। শফিক নামের এক পুরনো নিরাপত্তাকর্মী বলেন. ওইদিন এখানেই ছিলাম। সারারাত যে কী ভয়ের মধ্যে ছিলাম! এখন মনে পড়লে শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে।
এদিকে জঙ্গি হামলার দুই বছর উপলক্ষে সেখানে নিহতদের স্মরণে চার ঘণ্টার জন্য খোলা রাখা হবে হলি আর্টিজানের সেই ভবনটি। রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নিহতদের স্বজন, শুভানুধ্যায়ী, বিভিন্ন দূতাবাস, ব্যক্তি, সংগঠন ও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাদাত মেহেদী। গত বছরও প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে নিহতদের স্মরণে কয়েক ঘণ্টা খোলা রাখা হয়েছিল স্থাপনাটি।

No comments

Powered by Blogger.