নির্বাচন নিয়ে সিলেটে বিএনপি-জামায়াতের দ্বন্দ্ব by তুহিনুল হক তুহিন

প্রায় ১৯ বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোটবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করছে। তবে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন নিয়ে দুই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। এবারের সিটি নির্বাচনে বিএনপির আশা ছিল জামায়াত তাদেরকে সমর্থন দেবে। কিন্তু জামায়াত তা না করে উল্টো তাদের মেয়র প্রার্থী নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। ২০ দলীয় জোটের শরিক দল বিএনপি-জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে জামায়াত প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য বারবার তাগিদ দিলেও জেলা জামায়াত তাদের সিদ্ধান্তে অনড়।
জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন, সিলেট সিটি নির্বাচন স্থানীয় নির্বাচন, তাই তারা প্রার্থী দিয়েছেন। তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবে না।
বিএনপি নেতাদের দাবি, জামায়াত জোটের একটি শরিক দল। তাদের সঙ্গে বিএনপির আদর্শগত রাজনীতির কোনও মিল নেই। তবে তাদেরকে জোটে রাখা হয়েছে নির্বাচনের জন্য।
তবে জামায়াত ছাড়াও সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যার কারণে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী আরিফুল চৌধুরী খানিকটা বেকায়দায় পড়েছেন।  তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, সিলেটে জামায়াতের চেয়ে বিএনপি ও জোটের অন্যান্য শরিকদলগুলোর বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। জামায়াত তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলেও নির্বাচনে তেমন কোনও সম্যায় পড়তে হবে না বিএনপি প্রার্থীকে।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘বিএনপি চাচ্ছে জোটকে ধরে রাখতে। দলের অন্যান্য শরিক দল বিএনপির একক প্রার্থীর পক্ষে থাকলেও জামায়াত তাদের প্রার্থী নিয়ে ব্যস্ত। আমরা আশা করি জোটের ঐক্য ধরে রাখতে জামায়াতের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আমাদের শক্তিশালী জোটে ফাটল ধরাতেই একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সব ষড়যন্ত্র ভেঙে গত সিটি নির্বাচনের ন্যায় এবারও আমরা জয়ী হবো।’
তার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ চাচ্ছে সিলেট সিটি নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে ফলাফল তাদের পক্ষে নেওয়ার। এজন্য তারা দলের প্রার্থীর পক্ষে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বুধবার (৪ জুলাই) বর্ধিত সভা করে। ওই সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেছিলেন, ‘আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় ম্যারাডোনা একটি গোল করেছিল কেউ বলে ঈশ্বরের হাত দিয়ে আবার কেউ বলে পা দিয়ে। যাই হোক এবার নির্বাচনে হয় ঈশ্বরের হাত দিয়ে গোল হবে, না হয় পা দিয়ে।’ এতে প্রতীয়মান হয় জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ জোরপূর্বক তাদের পক্ষে ফলাফল নিতে চায়।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ও মেয়র পদপ্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন,  ‘সিলেট সিটি নির্বাচন একটি স্থানীয় নির্বাচন। জোটের সঙ্গে আমাদের থাকার কারণ সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ে। আমাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করা হলেও আমরা আমাদের দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর অনড় রয়েছি। বিএনপিকে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয়ভাবে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আমরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবো না। ইতোমধ্যে আমাদের নির্বাচনি সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। প্রতীক পাওয়ার পর আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করবো।’
জামায়াত ও বিএনপির টানাপড়েন নিয়ে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা বিচার বিশ্লেষণ চলছে। সব মিলিয়ে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে আরিফুল হক চৌধুরীর চিন্তাও বাড়ছে। কারণ এবার বিএনপির সঙ্গে জামায়াত নেই। এমনকি বিএনপির সঙ্গেও সিলেটের বিএনপির কয়েকটি গ্রুপ চাচ্ছে না আরিফুল হক চৌধুরীকে।
২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে হেফাজত, জামায়াতসহ জোটের অন্যান্য শরিক দলের সার্বিক প্রচেষ্টা ও সিলেট বিএনপির সব নেতারা এক থাকায় আরিফুল হক চৌধুরী প্রায় ৩০ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করেন। কিন্তু সিলেট সিটি নির্বাচনে জামায়াত বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে কোন ধরনের সমর্থন না জানিয়ে তারা এবার সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে মেয়র পদে প্রার্থী করেছে।

No comments

Powered by Blogger.