ভূমিধ্বস, বন্যার ঝুঁকিতে ২ লাখ রোহিঙ্গা

বর্ষা মৌসুম তার আগমন বার্তা জানান দিয়েছে বাংলাদেশে। দেশটির কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ইতোমধ্যে মৌসুমি বর্ষণে পর্যুদস্ত। জাতিসংঘ সতর্কবার্তা দিয়েছে যে, এসব ক্যাম্পগুলোতে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে আনুমানিক ২ লাখ ভূমিধ্বস ও বন্যায় ঝুঁকিতে রয়েছে। আর এর মধ্যে অর্ধেকের বেশিই শিশু। টাইম ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো ও অনানুষ্ঠানিক আশ্রয় শিবিরগুলো মৌসুমের প্রথম বর্ষণ হয় গেল সপ্তাহে। এতে সেখানকার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিলের এক বিবৃতি অনুযায়ী, এক শিশু ভূমিধ্বসে মারা গেছে।
ইউনিসেফের অনুমান মতে ভারী বর্ষণে ৯০০ আশ্রয় শিবির ও ২০০ ল্যাট্রিন ক্ষতিগ্রস্ত বা পুরোপুরি বরবাদ হয়ে গেছে। ক্ষতির এই পরিসংখ্যার আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা, পরবর্তী কয়েক মাস নিয়মিত মৌসুমি বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। আগস্ট মাস নাগাদ বর্ষার আধিক্য কমতে থাকে। তবে এরপর শুরু হয় সাইক্লোনের মৌসুম।
গেল আগস্টে কথিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার পর মিয়ানমার সামরিক বাহিনী চড়াও হয় রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর। এরপর প্রাণ বাঁচাতে নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয় ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর ওই অভিযান ‘গণহত্যার সকল বৈশিষ্ট্য বহন করে’ বলে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। এই শরণার্থীরা আসার আগে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার।
ইউনিসেফ বলছে, এ জনগোষ্ঠী ইতিমধ্যে তাদের ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছে। তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এখন প্রাকৃতিক এ দুর্যোগের মধ্যে তারা অরক্ষিত।
বাংলাদেশে ইউনিসেফ প্রতিনিধি এদুয়ার্দ বেইগবেদার বলেন, ‘হাজারো শিশু ও তাদের পরিবার গাছপালা-বিহীন পাহাড়ি এলাকায় নির্মিত আশ্রয় শিবিরে দিনাতিপাত করছে। সেই সাথে পাথুরে, বালুমাটির জায়গাগুলো এখন কর্দমাক্ত। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পানির স্তর দ্রুত ওপরে উঠতে থাকে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে অবস্থান করা শরণার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়াটা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বহু পরিবার যারা কিনা বিগত মাসগুলোতে বার বার দূর্দশাগ্রস্থ হয়েছে, তারা এখন নিজেদের অস্থায়ী আবাস ছেড়ে যেতে নারাজ।’
ভূমিধ্বস ও অকস্মাৎ বন্যার বিপদ ছাড়াও বর্ষা মৌসুমে কলেরা ও ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, বাঁশ-খুঁটি দিয়ে কোনমতে নির্মিত এসব আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মেরামত করতে আইরন প্যানেল ও তারপুলিন জড়ো করতে কাজ করছে সংস্থাটি।

No comments

Powered by Blogger.