১১ বছরের অবরুদ্ধ জীবনে গাজাবাসীর ঈদ

কদিন আগেই জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনকে কেন্দ্র করে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন গাজাবাসী। দুনিয়ার বৃহত্তম এ উন্মুক্ত কারাগারে শুধু গত মে মাসেই ৩১৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। আর গত মার্চের শেষ দিক থেকে এ পর্যন্ত দখলদার বাহিনীর হামলায় আহত হয়েছেন আরও ১৩ হাজার ফিলিস্তিনি। এমন পরিস্থিতিতেই শুক্রবার ঈদ উদযাপন করছেন ১০ বছরের ধরে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা।
২০০৭ সালের সালের ওই অবরোধে এমনিতেই অর্থনৈতিক ও মানবিক বিপর্যয়ের কবলে রয়েছেন গাজা উপত্যকার ২০ লাখ বাসিন্দা। তার ওপর রয়েছে যখন তখন হানাদার বাহিনীর তাণ্ডব। অবরোধের কারণে খাবার, জ্বালানি এবং ঔষধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী পাওয়ার মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত দুনিয়ার বৃহত্তম এ উন্মুক্ত কারাগারের বাসিন্দারা। আর এসব বঞ্চনাকে সঙ্গী করেই ঈদ উদযাপন করেন সেখানকার মানুষ।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আনাদোলু এজেন্সি জানান, ব্যবসায়ীরা যৌক্তিক দামে,  এমনকি ছাড় দিয়ে তাদের পণ্য বিক্রি করলেও বেশিরভাগ মানুষই অর্থসংকটে কেনাকাটা করতে পারছেন না।
এক ব্যবসায়ী বলেন, বেশিরভাগ মানুষই বাজারে আসেন। তবে সাধ্যের বাইরে হওয়ায় কোনও কেনাকাটা ছাড়াই তারা ফিরে যান।
শিশু কন্যাকে নিয়ে বাজারে গিয়েছিলেন সোহা আহমেদ। কিন্তু পছন্দের খেলনা কিনে দিতে না পারায় মেয়েটি কাঁদছিল। সোহা আহমেদ আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, ৫০ শেকেল (ফিলিস্তিনি মুদ্রা) দিয়ে মেয়ের জন্য জামা কিনতে এসেছি। খেলনা কেনার জন্য আমার হাতে আর কোনও অবশিষ্ট অর্থ নেই।
এই নারী বলেন, ‘আমার স্বামী রামাল্লায় একজন সরকারি চাকরিজীবী। এক সপ্তাহ আগে তিনি আংশিক বেতন পেয়েছেন। কিন্তু এ টাকা থেকে আগের মাসের দেনা পরিশোধ করতে হবে।
মুসলিম দেশগুলোতে ঈদের মৌসুমে সাধারণত খেলনার দোকানগুলোতে ভিড় থাকে। ছোট ছোট শিশুরা তাদের পছন্দের নানা খেলনা কিনে থাকে। কিন্তু গাজার ২৮ বছরের ব্যবসায়ী ইব্রাহিম হাবৌশের দোকানে সেই জৌলুস নেই। তার দোকানে ক্রেতারই অভাব।
ইব্রাহিম হাবৌশ জানান, এ বছর তার দোকানের মাত্র ২০ শতাংশ সামগ্রী বিক্রি হয়েছে।
গাজা উপত্যকার ২০ লাখ মানুষের মধ্যে ১০ লাখই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আরব ও মুসলিম দেশগুলোর ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। গাজা চেম্বার অব কমার্সের মুখপাত্র মাহের আল তাব্বা বলেন, উপত্যকায় দারিদ্র্যের হার ৫৩ শতাংশে পৌঁছেছে। আর খাদ্য নিরাপত্তার বাইরে রয়েছেন গাজার ৭২ শতাংশ বাসিন্দা।

No comments

Powered by Blogger.