৩০টি লাশ পড়ে আছে মর্গে জুটছে না হিমাগার, কবর by রুদ্র মিজান

লাশগুলো পড়ে আছে। একটি দুটি না, ৩০টি বেওয়ারিশ লাশ। দুই-এক দিন না। দীর্ঘ দুই সপ্তাহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে লাশ। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মর্গে পর্যাপ্ত ফ্রিজার না থাকায় সাধারণভাবে এসব লাশ রাখা হয়েছে। জটিলতার কারণে এসব লাশের কবরও দেয়া যাচ্ছে না।
ঢামেক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই হাসপাতালের মর্গে বাড়ছে অজ্ঞাত লাশের সংখ্যা। গত দুই সপ্তাহে ৩০টি বেওয়ারিশ লাশ জমা হয়েছে মর্গে। মর্গের ময়নাতদন্তের কাজ সম্পন্ন হলেও দাফন করা হচ্ছেনা। লাশগুলোতে পচন ধরেছে। মেডিসিন দিয়ে দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে চেষ্টা করলেও দিন-দিন দুর্গন্ধ বাড়ছেই। গতকাল দুপুরে মর্গে গিয়ে দেখা গেছে, লাশকাটা ঘরে পড়ে আছে এসব অপরিচিত লাশ। কর্তব্যরতরা দুর্গন্ধের মধ্যেই কাজ করছেন। সব লাশ হিমাগারের ফ্রিজে রাখার কথা থাকলেও তা স্ট্রেচারের স্তূপে রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালের পাঁচটি ফ্রিজের তিনটিই নষ্ট। সচল থাকা দুটি ফ্রিজে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে ২০টি লাশ। এ অবস্থায় বারবার আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেও লাশগুলো কবরস্থ করা সম্ভব হচ্ছে না।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কর্তব্যরত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, বেওয়ারিশ এসব লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। কিন্তু কবরস্থানের ঠিকাদার লাশ নিচ্ছেন না। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন এখন লাশ নেয়া সম্ভব না। এখানে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কিছু করার নেই জানিয়ে মাহমুদুর হাসান বলেন, তবে আমরা চেষ্টা করছি বসিলা কবরস্থানে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করতে। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। কবে নাগাদ এসব লাশ দাফন করা সম্ভব হবে তা জানাতে পারেননি তিনি।
জানা গেছে, রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে ১৬ একর জায়গা রয়েছে। সেখানে দুই একর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য, ব্যক্তি পর্যায়ে রিজার্ভ রয়েছে ছয় একর, বাকি আট একরই বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জন্য। প্রতিদিনই জুরাইন কবরস্থানে বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হতো। কবরস্থান পরিচালনা কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে প্রতি মাসে তিন শতাধিক বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হয়েছে এই কবরস্থানে। গত আট মাসে দুই হাজার আটশ’ লাশ দাফন করা হয়েছে সেখানে। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ যাবত জুরাইন কবরস্থানে বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হচ্ছে না। জুরাইন কবরস্থানের ঠিকাদার শাহাদাত হোসেন জানান, দুই সপ্তাহ যাবত বৃষ্টির কারণে লাশ দাফন করা হয়নি। কবরের মাটি খুঁড়লেই হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। এ অবস্থায় লাশ দাফন করা সম্ভব না বলে জানান তিনি। যদিও স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনই লাশ দাফন হচ্ছে কিন্তু বেওয়ারিশ লাশের ক্ষেত্রেই বৃষ্টি-পানির অজুহাত দেখাচ্ছেন ঠিকাদার। এ বিষয়ে
জানতে চাইলে অন্যান্য লাশ দাফনের বিষয়টি স্বীকার করে ঠিকাদার শাহাদাত হোসেন বলেন, বেওয়ারিশ লাশ যে স্থানে দাফন করা হয় সেই জায়গায় মাটির নিচে পানি জমে আছে।
সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি লাশ দাফনের ক্ষেত্রে সহস্রাধিক টাকা ব্যয় হয় মৃত ব্যক্তির স্বজনদের। কবরস্থানের শ্রমিক, ইমাম ও কবরস্থানের ঠিকাদারকে দিতে হয় এই টাকা। কিন্তু বেওয়ারিশ লাশ দাফনের ক্ষেত্রে কোনো টাকা পান না কবরস্থানের ঠিকাদার। সূত্রমতে, মূলত এই কারণেই বেওয়ারিশ লাশ দাফন করতে চান না কবরস্থানের ঠিকাদার। এ বিষয়ে ঠিকাদার শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রতিটি লাশ দাফনের ক্ষেত্রে ৩৬০ টাকা পর্যন্ত নেন তিনি। বেওয়ারিশ লাশের ক্ষেত্রে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কোনো টাকা দেয় না। তারা তা আশাও করেন না। এটি মানবিক কাজ বলেই মনে করেন তিনি। শাহাদাত বলেন, বেওয়ারিশ লাশ শুধু জুরাইনে দাফন করতে চাচ্ছে আঞ্জুমান। বসিলায় বেওয়ারিশ লাশ দাফনের জন্য কবরস্থান রয়েছে। সেখানে দাফন করলেই সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু গাড়ির তেল খরচসহ টাকা বাঁচাতে তারা বসিলায় যেতে চান না। জুরাইনে বেওয়ারিশ লাশ দাফনে আগ্রহী তারা। যদিও আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কর্র্তৃপক্ষ জানান, দ্রুত লাশ দাফনের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা। জুরাইনের ঠিকাদার লাশ না নেয়ার কারণে বসিলা কবরস্থানে দাফনের বিষয়ে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.