নারীর ওপর নিষেধাজ্ঞা

যে দেশে প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী, সে দেশে নারীকে ফসলের মাঠে কাজ করতে না যাওয়ার ফতোয়ার খবরটি একই সঙ্গে আমাদের উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা আরও বিস্মিত হয়েছি যে এই নারীবিদ্বেষী প্রচারণা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজের নীরবতা দেখে। গতকাল প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নারীদের ফসলের মাঠে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর জামে মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। মসজিদ পরিচালনা কমিটির যে বৈঠকে এই বেআইনি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাতে ইমাম ছাড়াও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য পদাধিকারীও উপস্থিত ছিলেন। অতএব, এটিকে ব্যক্তিবিশেষের সিদ্ধান্ত হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। নারীরা ফসলের মাঠে গেলে ফসল চুরি ও অসামাজিক কাজ হয় বলে মসজিদ কমিটি দাবি করলেও তার পক্ষে কোনো তথ্য–প্রমাণ দিতে পারেনি। কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে, তা তিনি নারী হোন বা পুরুষ হোন তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার নেওয়ার বিধান আছে। মসজিদ কমিটি কারও বিরুদ্ধে তথ্য–প্রমাণ না দিয়ে ঢালাও অভিযোগ এনে নারীদের মাঠে যাওয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সেটি কেবল অনৈতিক নয়, আইনের চোখেও অন্যায়। স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবিষয়ক বৈঠকে তোলার কথা বলেছেন। এ রকম একটি গুরুতর বিষয়ে বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা করার যুক্তি আছে বলে আমরা মনে করি না। দেশের সংবিধান নারী-পুরুষনির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিককে অবাধে চলাচলের অধিকার দিয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কাউকে বাধা দিলে সেটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবেই গণ্য হবে। অতএব, প্রশাসনের দায়িত্ব হবে কল্যাণপুর জামে মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। এ ধরনের ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে ধর্ম কিংবা সমাজ কোনোটাই নিরাপদ নয়। দ্বিতীয়ত, নারীরা যাতে নির্বিঘ্নে মাঠে যেতে পারেন, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। সংশ্লিষ্টদের জানা উচিত, সমাজটা শুধু পুরুষের একার নয়, নারীদেরও সমান অধিকার আছে।

No comments

Powered by Blogger.