পশু মোটাতাজাকরণে স্টেরয়েডের বিপজ্জনক ব্যবহার

ঈদ এলেই কোরবানির জন্য মোটাতাজা, নাদুস-নুদুস গবাদি পশুর চাহিদা বাড়ে। অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও গবাদি পশু এবং পোলট্রি উৎপাদনে নানা ধরনের স্টেরয়েড ব্যবহৃত হয়। এসব স্টেরয়েডের মধ্যে রয়েছে ডেক্সামেথাসন, বিটা মেথাসন, প্রেডনিসোলন, কর্টিসন, ইস্ট্রাডায়ল, টেস্টোস্টেরন, প্রোজেস্টরন, ইস্ট্রোজেন ইত্যাদি। মাংস উৎপাদনে এসব স্টেরয়েডের ব্যবহার স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়তই কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত এসব মাংস আমরা খাচ্ছি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়ার শিকার হচ্ছি। স্টেরয়েডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, উচ্চরক্তচাপ, এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি ও এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস, ইশকিমিয়া, মাইয়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, হার্ট ফেলিয়ার, স্ট্রোক, অস্টিওপোরোসিস, প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড ও স্তনের আকার বৃদ্ধি এবং প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস। বিভিন্ন ধরনের স্টেরয়েড হরমোন শরীরের প্রাকৃতিক হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতায় অস্থিতিশীলতা ডেকে আনে; ক্যান্সার সৃষ্টি ছাড়াও লিভার এবং কিডনি ধ্বংস করে। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও বিশ্বের ভোক্তা সংগঠনগুলো গত ত্রিশ বছর ধরে মাংস উৎপাদনে স্টেরয়েড ব্যবহার না করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ব্যাপক হারে স্টেরয়েড হরমোন ব্যবহৃত হয়ে আসছে গবাদি পশু মোটাতাজাকরণে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও সরকার ব্যাপারটি গুরুত্বসহ বিবেচনায় নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে- দেশবাসী এটাই আশা করে। কোরবানির জন্য কী ধরনের পশু কিনলে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে ভাবার জন্যও জনসাধারণকে অনুরোধ করছি। মনে রাখতে হবে,
মোটাতাজা, ভারি, স্থবির ও চর্বিযুক্ত গরু ভালো গরু নয়, হালকা-পাতলা, চিকন ও চটপটে গরুই আসলে ভালো গরু। মাঝে মধ্যে মনে হয়, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রষুক্তিগত উন্নয়ন আমাদের অনেক সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের অপব্যবহারের কারণে মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উন্নতি, অগ্রগতি এবং বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে আমরা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক জীবন থেকে বহুদূরে ছিটকে পড়েছি এবং অতিমাত্রায় কৃত্রিম জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ছয় রকম অ্যানাবলিক স্টেরয়েড গবাদি পশু ও পোলট্রির ওপর প্রয়োগ করা হয়। এগুলো হল ইস্ট্রাডায়ল, টেস্টোস্টেরন, প্রোজেস্টেরন, ইসট্রোজেন, অ্যানড্রোজেন ট্রেনবোলন অ্যাসিটেড ও প্রোজেস্টিন মেলেঙ্গেস্টেরল অ্যাসিটেড। কেউ যদি হরমোনসমৃদ্ধ গরু, শূকর ও মুরগির মাংস খায় এবং দুধ পান করে, তবে এসব ক্ষতিকর হরমোন পরোক্ষভাবে শরীরে ঢুকে মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। হরমোনসমৃদ্ধ মাংস এবং দুধ খেলে মানুষের শরীরে বাড়তি হরমোন প্রবেশের কারণে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হরমোনমাত্রায় ভীষণ তারতম্যের সৃষ্টি হয়। কারণ শরীর এমনিতেই এসব হরমোন পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রস্তুত করে থাকে। এসব বাড়তি হরমোন গ্রহণের কারণে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। বাড়ন্ত শরীরে খাদ্য থেকে প্রাপ্ত সামান্য পরিমাণ হরমোনও শরীরে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। লস এঞ্জেলেস টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন আট বছর বয়স্ক শিশু যদি একদিনে স্টেরয়েডসমৃদ্ধ মাংস দ্বারা প্রস্তুত দুটি হ্যামবার্গার খায়, তবে তার শরীরে হরমোনের মাত্রা ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। এটাকে অত্যন্ত রক্ষণশীল হিসাব বলে পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে।
মনে রাখা দরকার, ছোট শিশুদের শরীরে অত্যন্ত অল্প পরিমাণে প্রাকৃতিক হরমোন থাকে। ক্যান্সার প্রিভেনশন কোয়ালিশন বাবা-মা’দের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, মাংসে সামান্য পরিমাণ হরমোনের উপস্থিতি শিশুদের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। যে কোনো পরিমাণের হরমোনই শিশুদের জন্য অনিরাপদ। কারণ একটি ধাতব মুদ্রার সমান মাংসে কোটি কোটি হরমোন অণু থাকে। স্টেরয়েড হরমোন দ্বারা প্রতিপালিত গরুর মাংস খেলে শিশুদের মস্তিষ্কসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনে বিপত্তির সৃষ্টি হতে পারে। হরমোনসমৃদ্ধ মাংসের প্রভাবের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গরুর বয়োবৃদ্ধি ও পেশি গঠনের জন্য ব্যবহৃত ইসট্রোজেন, অ্যানড্রোজেন ও অ্যান্টিঅ্যানড্রোজেনের প্রভাবে শিশুর বাড়ন্ত শরীরের কোনো কোনো অঙ্গ অন্যান্য অঙ্গের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। শিশুদের মতো বয়স্কদের ক্ষেত্রে মাংসের মাধ্যমে স্টেরয়েড গ্রহণ বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। বিপদ আরও আছে। গবাদি পশুর মল-মূত্রের মাধ্যমে এসব হরমোন আবার পরিবেশে ফিরে আসে। যা আবার অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং মানবদেহে ঢুকে আবারও সমস্যা সৃষ্টি করছে। এত সমস্যার পরও যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও এফডিএ (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) এসব ক্ষতিকর হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে গবাদি পশুর প্রতিপালন এবং বয়োবৃদ্ধি রোধে কোনো কার্যকর আইনগত ব্যবস্থা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রিত ৮০ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয় গবাদি পশুর মাংস ও পোলট্রি উৎপাদনে। অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক স্বাস্থ্যবান গবাদি পশুর ওপর প্রয়োগ করা হয় বয়োবৃদ্ধি ঘটানোর জন্য। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক অবশ্য ব্যবহৃত হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকা গবাদি পশু ও পোলট্রির সংক্রামক রোগ নিরাময়ের জন্য। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে,
এসব গবাদি পশু ও পোলট্রির ক্ষেত্রে প্রয়োগকৃত অ্যান্টিবায়োটিক কী এমন সুপারবাগ (জীবাণূ যার বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর নয়) নামের দানব সৃষ্টি করছে যা মানব সভ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোক্তা সংগঠনগুলোর অভিমত হল- গবাদি পশু ও পোলট্রিতে ব্যাপকমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য এক মহাবিপর্যয়ের কারণ হয়ে পড়েছে। পশু-পাখির ওপর প্রয়োগকৃত অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে এমন সব সুপারবাগের উৎপত্তি হচ্ছে যা প্রথমত মাংসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে এবং দ্বিতীয়ত পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার ঘটাচ্ছে। এসব সুপারবাগ জিন ট্রান্সফার বা মিউটেশনের মাধ্যমে অন্যান্য জীবাণুকে অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনে সাহায্য করছে। এ ধরনের মারাত্মক হুমকি ও বিপদের কথা চিন্তা করে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, আমেরিকান হেলথ অ্যাসোসিয়েশন, ইনফেকশাস ডিজিজ সোসাইটি অব আমেরিকা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একমত পোষণ করে ঘোষণা দিয়েছে- পশু খাদ্য উৎপাদনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন ও ওয়ার্ল্ড অ্যানিম্যাল হেলথ অর্গানাইজেশন কর্তৃক আয়োজিত এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেন, গবেষকদের হাতে স্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, গবাদি পশু ও পোলট্রিতে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে সৃষ্ট রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু জনস্বাস্থ্যের ওপর অপূরণীয় ক্ষতি সৃষ্টি করে।
এসব ক্ষতির মধ্যে রয়েছে- মৃত্যুসহ সংক্রামক রোগের চিকিৎসা ব্যর্থ হয়ে যাওয়া এবং সংক্রামক রোগের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাওয়া। ২০১০ সালে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার ও সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্যদানকালে বলেছে, মাংস উৎপাদনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং মানুষের সংক্রামক রোগ চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস বা লুপ্ত হওয়ার মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সিডিসির পরিচালক ড. থোমাস ফ্রিডেন দৃঢ়ভাবে বলেন, মাংস উৎপাদনের উদ্দেশ্যে পশুর ওপর অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ এবং মানুষের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের মধ্য গভীর সম্পর্কের অকাট্য তথ্য প্রমাণ রয়েছে। ২০১২ সালে এফডিএ প্রকাশ করে, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে জীবাণুর বিবর্তন প্রক্রিয়ার সহায়ক ভূমিকা পালন করে যার ফলে রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুর বংশবৃদ্ধি এবং বিস্তার অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল জীবাণুর চেয়ে অনেক দ্রুত ঘটে থাকে। ফলে এসব রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুর কারণে মানুষের সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা ও ঝুঁকি সংবেদনশীল জীবাণুর চেয়ে অনেকগুণ বেড়ে যায়। ১৯৯৫ সাল থেকে পোলট্রি উৎপাদনে সিপ্রোফ্লক্সাসিন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৯৯৯ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেল,
পরীক্ষিত ২০ শতাংশ মুরগির বুকের মাংসে সিপ্রোফ্লক্সাসিন রেজিস্ট্যান্ট সংক্রামক রোগ সৃষ্টিকারী ক্যামপাইলোব্যাকটার জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর ২০০৫ সালে এফডিএ মুরগি উৎপাদনে সিপ্রোফ্লক্সাসিন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপে সক্ষম হয়। ২০০৫ সালে মুরগির মাংসে প্রায় ৩০ শতাংশ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুর উপস্থিতি প্রমাণিত হয়। ওষুধটি বন্ধ হওয়ার পর ২০১০ সাল নাগাদ সিপ্রোফ্লক্সাসিন রেজিস্ট্যান্ট জীবাণুর উপস্থিতি ১৩ শতাংশে নেমে আসে। এর সুস্পষ্ট কারণ রয়েছে। যখন কোনো পশুর ওপর অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়, তখন পশুর মধ্যে জীবাণুর একাংশ অ্যান্টিবায়োটিক ধ্বংস করে; কিন্তু বাকি অংশ অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি সংবেদনশীল না হওয়ার কারণে বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকে এবং বংশবৃদ্ধি করতে থাকে। এসব জীবাণুকে আমরা বলে থাকি সুপারবাগ। এ মরণঘাতী সুপারবাগের বিস্তার ঘটলে ব্যাপকহারে মানুষ অসুস্থ হওয়া ছাড়াও মৃত্যুবরণ করতে পারে। ২০১১ সালে ঠিক এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল। যুক্তরাষ্ট্রে সালমোনেলা জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত টার্কি মোরগের মাংস খেয়ে হঠাৎ করে ১৩৬ জন মানুষ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং একজনের মৃত্যু হয়। অ্যাম্পিসিলিন, স্ট্রেপ্টোমাইসিন, টেট্রাসাইক্লিন, জেন্টামাইসিনসহ আরও কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক এ সালমোনেলা জীবাণুর বিরুদ্ধে অকার্যকর হয়ে পড়ে। পরে ৩ কোটি ৬০ লাখ পাউন্ড টার্কি মোরগ বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়। অন্য এক ঘটনায় সালমোনেলা জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত গরুর মাংস খেয়ে ১৯ জন মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এ সালমোনেলার বিরুদ্ধে অ্যামোক্সিসিলিন,
ক্ল্যাভুলেনিক অ্যাসিড, অ্যাম্পিসিলিন, সেপ্ট্রিয়াক্সন, সেফোক্সিটিন, কেনামাইসিন, স্ট্রেপ্টোমাইসিন ও সালফিসোক্সাজল অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজ করেনি। গবাদি পশু ও পোলট্রি উৎপাদনে স্টেরয়েড এবং অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিঃসন্দেহে জনস্বাস্থ্যের জন্য প্রচণ্ড ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ঝুঁকি বিশেষ কোনো অঞ্চল বা দেশের জন্য নয়, এ ঝুঁকি সারা বিশ্বের জন্য। বিশ্বায়নের এ যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং বিস্তার কোনো সীমানা মানছে না। যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা দেশগুলো যেমন গবাদি পশু ও পোলট্রি উৎপাদনে স্টেরয়েড এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে, তেমনি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোও এই একই ক্ষতিকর ওষুধের মাধ্যমে মাংস উৎপাদন করছে। আমরা সেই মাংস প্রতিনিয়ত খাচ্ছি এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়ার শিকার হচ্ছি। মাংস উৎপাদনে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে যে সুপারবাগের সৃষ্টি হচ্ছে তা এক সময় মহামারি আকারে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং মানবসভ্যতার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। জনগণ ও চাষীদের মধ্যে ইতিমধ্যে কিছুটা সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রচার মাধ্যমগুলোয় প্রচার করা হলেও আমার জানা মতে, বাংলাদেশে এখনও গবাদি পশু ও পোলট্রি উৎপাদনে ব্যাপকহারে নানা ধরনের স্টেরয়েড ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদের দাবি, গবাদি পশু ও পোলট্রি উৎপাদনে এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।
মুনীরউদ্দিন আহমদ : অধ্যাপক, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
drmuniruddin@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.