কমিটি যুগোপযোগী হয়েছে

বিএনপির এবারের কমিটিটি যে আকারে সামান্য বড় হয়েছে, এর কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমত, বিগত বছরগুলোয় বর্তমান স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের দমননীতির কারণে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। বর্তমান সরকার দেশে এক ধরনের রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির পক্ষে নিয়মমাফিক সময়ে কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। সময়ের বিস্তারের কারণে নেতা হওয়ার মতো কর্মীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ বর্ধিত সংখ্যা আমাদের ধারণ করতে হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বর্তমান সরকারের দমননীতি সৃষ্ট পরিবেশে অনেকেই ত্যাগ-তিতিক্ষার স্বাক্ষর রেখেছেন। দল ও দলের আদর্শের জন্য জীবনবাজি রেখেছেন। জেলে গিয়েছেন, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই বিপুলসংখ্যক ত্যাগী নেতাকর্মীর কথা চিন্তায় আনতে হয়েছে। তৃতীয়ত, এবারের কমিটি প্রস্তুতের আগে মেধাবী, তরুণ এবং নারী সমাজের কথা বিশেষভাবে ভাবতে হয়েছে। রাজনৈতিক দল তো শুধু রাজনীতি করে না, সমাজ ও রাষ্ট্রের সবকিছুরই দেখভাল করে থাকে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বর্তমান কমিটিতে অধ্যাপক, ডাক্তার, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ আমরা বিএনপিকে মেধাভিত্তিক, দক্ষ করে গড়ে তুলতে চেয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই কমিটিটি একটু বড় হয়েছে। তাও সেটা খুব বড় নয়।
গতবারের চেয়ে মাত্র ১২০ জন অতিরিক্ত অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। আমি মনে করি বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবং দেশের ভবিষ্যৎ চিন্তা করলে এই বর্ধিত কমিটি গঠন অযৌক্তিক হয়নি। অনেকে বলেন, কমিটিতে পরিবারতন্ত্রকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এসব কথা অন্তঃসারশূন্য। কোনো রাজনৈতিক পরিবারের কেউ যদি রাজনীতি করতে চায় এবং তার যোগ্যতা থাকে, তাহলে তাকে বাধা দেয়া যাবে কোন যুক্তিতে? ব্রিটেনসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই রাজনীতিকের ছেলে রাজনীতি করছেন, এমপি হচ্ছেন। মূল কথা হচ্ছে, রাজনৈতিক পরিবারের অযোগ্য কাউকে মাত্রাতিরিক্ত পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে কিনা। তারেক রহমানের কথাই ধরা যাক। তিনি রাজনীতি করছেন ১৯৯১ সাল থেকে। ২০০১ সালের বিএনপির নির্বাচন মূলত তিনিই পরিচালনা করেন। তিনি তার বাবা জিয়াউর রহমানের মতো গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে বেড়িয়েছেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। দল পুনর্গঠনের কাজেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এখন কেউ যদি বলেন, তাকে কেন বিএনপির এত বড় পদ দেয়া হল, সেটা যুক্তিতে টিকবে না। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আছে এবং রাজনীতির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এমন যে কেউই যথাযথ যোগ্যতা সাপেক্ষে নেতা হতে পারেন বৈকি। আমি মনে করি আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম শুধু নয়, এদেশের রাজনীতির মঙ্গলার্থেই এমন একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। তাছাড়া আমরা তরুণ নেতৃত্বের ওপর জোর দিয়েছি। নারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এই কমিটির সদস্যরা তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে আগামী দিনে বর্তমানের অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে সফল আন্দোলন রচনা করতে পারবেন বলেই আমার বিশ্বাস। নিঃসন্দেহে এই কমিটি যুগোপযোগী হয়েছে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য

No comments

Powered by Blogger.