বিদেশি নাগরিকদের আশ্বস্ত করা জরুরি

গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার মূল লক্ষ্য যে ছিল বিদেশি নাগরিকেরা, সেটা পরিষ্কার। সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারানো ২০ জনের মধ্যে ১৭ জনই বিদেশি নাগরিক। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিদেশি নাগরিকেরা বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হতে পারে, দেশের রপ্তানি, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়াই শোকার্ত বাংলাদেশের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। গুলশানে হামলার ঘটনায় নিহত নয় ইতালীয় নাগরিকের মধ্যে ছয়জনই ছিলেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্রেতা। আর জাপানের সাত নাগরিকই বাংলাদেশে এসেছিলেন মেট্রোরেলের পরামর্শক হিসেবে। গতকাল নিহত এই বিদেশিদের মরদেহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই মরদেহগুলো যখন দেশে ফিরবে তখন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে আরেক দফা প্রতিক্রিয়া হবে, এটাই স্বাভাবিক। সরকারকে এসব দিক বিবেচনায় রাখতে হবে এবং খুবই সংবেদনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। সন্ত্রাসবাদ এখন এমন এক বৈশ্বিক সমস্যা যা সামাল দিতে উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে।
এই বাস্তবতায় বাংলাদেশকে এখন বিশ্বের সামনে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় তার আন্তরিক উদ্যোগের বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। যেসব দেশের নাগরিকেরা গুলশানের সন্ত্রাসে নিহত হয়েছেন, সেসব দেশের জনগণ ও সরকার এই ঘটনার তদন্ত, বিচার–প্রক্রিয়ার দিকে নজর রাখবে। ফলে এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা-ও এখন আন্তর্জাতিক মহলের নজরদারির মধ্যে থাকবে। জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও উন্নয়নের সম্ভাবনাকে নষ্ট করতে দেওয়া যাবে না। দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এরই মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। নিরাপত্তাব্যবস্থার দৃশ্যমান উন্নতির মাধ্যমেই কেবল বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর এবং সেখানকার নাগরিকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আমরা আশা করব সরকার বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবে এবং দেশের অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে, যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আস্থা ফিরে পায়।

No comments

Powered by Blogger.