হিরোশিমার ক্ষত শুকানোর নয়

হিরোশিমা মেমোরিয়াল পাক স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন
শেষে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে করমর্দন
করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। জি-৭
সম্মেলনের শেষ দিন শুক্রবার ঐতিহাসিক হিরোশিমা
সফরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের (হিবাকুশা)
সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ওবামা। এসময় ওবামা পারমানবিক
অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন -ডেইলি মেইল
হিরোশিমার ক্ষত শুকানোর নয়। হিরোশিমার নীরব কান্না থেকেই আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। ৭১ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক বোমার আঘাতে জাপানের যে নগরী মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছিল, শুক্রবার সেই হিরোশিমা সফরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এসব কথা বলেন। খবর এএফপি, রয়টার্স ও ডেইলি মেইলের। দুই দিনব্যাপী জি-৭ সম্মেলনের শেষদিন শুক্রবার ইসেশিমা থেকে স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে হিরোশিমা পৌঁছেন ওবামা। ৫টা ৪০ মিনিটে হিরোশিমা মেমোরিয়াল পার্কে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে নীরবতা পালন করেন তিনি। পরে শিনজো আবেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর স্থানীয় খোলা মাঠে পারমাণবিক বোমায় আক্রান্তদের অংশগ্রহণে এক স্মৃতিচারণ সভায় বক্তৃতা দেয়ার সময় বারাক ওবামা বলেন, ‘৭১ বছর আগে আকাশ থেকে মৃত্যু পড়েছিল এবং পরিবর্তন ঘটেছিল বিশ্বে। আমি এখানে কেন এসেছি- এ প্রশ্ন অনেকে করতে পারেন, কিন্তু আমি এসেছি মানবিক বিবেচনায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো ভাষায় হিরোশিমা দুদর্শার কথা বর্ণনা করা কঠিন।’ এক লাখের বেশি নিহতের স্মরণ করে ওবামা বলেন, ‘চলুন আমরা এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সন্তানদের বলি, নৃশংসতা কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা আজ বুঝতে শিখেছি,
এ ধরনের যুদ্ধ মানব সভ্যতার জন্য কতটা হুমকি হতে পারে।’ ক্ষমা চাওয়ার বিষয় আগেই নাকচ করলেও এদিন ওবামা বলেন, ‘আমরা কৃতজ্ঞচিত্রে যুদ্ধের সময় নিহতদের স্মরণ করছি। ইতিহাস থেকে আমরা সরাসরি শিক্ষা নিয়েছি। তাই পারমাণবিক অস্ত্র আর কখনও মানব সভ্যতার প্রয়োজন পড়বে না।’ ওই সভায় শিনজো আবে বলেন, ‘আমরা এ ধরনের ট্রাজেডির পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। যারা আজ বেঁচে আছেন তাদের কাছে আমাদের অঙ্গীকার হবে, পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন নতুন বিশ্ব।’ জাপানি ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের স্মরণ করিয়ে আবে বলেন, ওবামার ঐতিহাসিক সফর মনে করে দিচ্ছে, পারমাণবিবক অস্ত্র কতটা ভয়ানক। এরপর ওবামা হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমায় আক্রান্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তাদের কষ্টের কথা শোনেন। এ সময় তিনি বৃদ্ধ এক ব্যক্তিকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। এতে ওই ব্যক্তি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ৯১ বছর বয়সী আরেক ব্যক্তির সঙ্গে করমর্দনের পর ধূসর রংয়ের স্যুট পরা অপর এক ব্যক্তিকে জড়িয়ে ধরেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পরে ওবামা হিরোশিমার স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। দায়িত্বে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামাই প্রথম হিরোশিমা সফর করলেন। ওবামার আগে ১১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি হিরোশিমা সফর করেন। উল্লেখ্য, ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমার আঘাতে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। এর তিন দিন পর ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমা হামলায় মারা যান আরও ৭৪ হাজার মানুষ।

No comments

Powered by Blogger.