তলানিতে শেয়ারবাজার

তলানিতে পড়ে আছে শেয়ারবাজার। দিন দিন অবস্থা আরও করুণ হচ্ছে। অবস্থা এমন মৌলভিত্তি সম্পূর্ণ শেয়ারের দামও অযৌক্তিকভাবে কমছে। এতে উধাও হয়ে যাচ্ছে পুঁজি। বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও হতাশা বাড়ছে। ফলে নতুন করে বিনিয়োগ আসছে না। এ কারণে ধারাবাহিকভাবে লেনদেন ও মূল্যসূচক কমছে। বৃহস্পতিবার দেশের দুই শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকও বাজারমূলধন কমেছে। এরমধ্যে ডিএসইর সূচক কমেছে ১৯ পয়েন্ট এবং সিএসইর সূচক কমেছে ৩১ পয়েন্ট। একইভাবে উভয় শেয়ারবাজারেই কমেছে লেনদেনও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা বাড়ানোর কথা বলছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এখনও প্রকাশ্য কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। ফলে বিষয়টি ধোঁয়াসা রয়ে গেল। এছাড়া বাজারে একমি ল্যাবরেটরির মতো বড় একটি কোম্পানির আইপিও আবেদন জমা হচ্ছে। সেকেন্ডারি মার্কেটের কিছু টাকা প্রাইমারি মার্কেটে চলে যাচ্ছে। তারল্য সংকটের এটাও একটি কারণ। জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয় নিয়ে দীর্ঘদিন কথা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত উচিত। তার মতে, বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে বাজারে বিভ্রান্তি ছড়ানো উচিত নয়। বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসইর শীর্ষ ৩০ কোম্পানির তালিকায় থাকা মৌলভিত্তি সম্পূর্ণ কোম্পানির শেয়ারের দাম ধারাবাহিকভাবে কমছে। এছাড়া ভালো লভ্যাংশ দেয়ার পরও বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যে নেমে এসেছে। জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক ও রকিবুর রহমান বলেন, ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা সমন্বয়ের ব্যাপারে পরিষ্কার সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এছাড়াও দেশের শিল্পায়নের স্বার্থে আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া জরুরি। সর্বোপরি কথা হল বাজারে তারল্য বাড়ে, সরকারকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জানা গেছে, ২০০৯ সালের শুরুতে শেয়ারবাজারে আগ্রাসীভাবে বিনিয়োগ করে ব্যাংক। ওই সময়ে বিনিয়োগের সীমা ছিল ব্যাংকের মোট আমানতের ১০ শতাংশ। কিন্তু এ সময়ে আইনের তোয়াক্কা না করে ব্যাংকগুলো বাজারে বিনিয়োগ করতে থাকে। কোনো কোনো ব্যাংক এ সময়ে আমানতে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছিল।
ফলে মৌলভিত্তি উপেক্ষা করে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম সীমাহীনভাবে বেড়ে যায়। এরপর ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ তুলে নিয়ে বাজারে বিপর্যয় নেমে আসে। পরবর্তীতে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশের আলোকে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়। সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে তাদের পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন আর্নিংয়ের মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশের বেশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে না। তবে বর্তমানে কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ ২৫ শতাংশের বেশি থাকলে তা ৩ বছরের মধ্যে কমিয়ে আনতে হবে। আর চলতি বছরের ২১ জুলাই এ সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট এই ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। সরকারও ২ বছর বাড়ানোর প্রতিশ্র“তি দিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে পরিষ্কার করে কোনো সার্কুলার ইস্যু হয়নি। এদিকে সপ্তাহের শেষদিনে বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ৩১৫টি ১০ কোটি ৬ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ৪১৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগের দিনের চেয়ে যা ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা কম।
ডিএসই ব্রডসূচক আগের দিনের চেয়ে ১৯ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৩৪০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসই-৩০ মূল্যসূচক ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৬৬৬ পয়েন্টে নেমে এসেছে। ডিএসইএস শরিয়াহ্ সূচক দশমিক ৬৩ বেড়ে ১ হাজার পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। এরমধ্যে দাম বেড়েছে ৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের, কমেছে ১৮১টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪০টি কোম্পানির শেয়ার। ডিএসইর বাজার মূলধন আগের দিনের চেয়ে কমে ৩ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। সিএসই : চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে বৃহস্পতিবার ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের ৭৮ লাখ ৩৫ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার মোট মূল্য ২৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে দাম বেড়েছে ৬৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের, কমেছে ১৩৯টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক আগের দিনের চেয়ে ৩১ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৩৮২ পয়েন্টে নেমে এসেছে। সিএসই ৩০ মূল্যসূচক ৪৬ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ২৫৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। সিএসইর বাজার মূলধন আগের দিনের চেয়ে বেড়ে ২ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.